রবীন্দ্রত্তর-সমসাময়িক বা রবীন্দ্র পরবর্তী সাহিত্য সমাজে কতটা প্রভাব বিস্তার করে চলেছে তার আখ্যান বর্তমান প্রবন্ধে উল্লেখ নেই , উল্লেখ নেই মধ্যযুগের সাহিত্যেরও । বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জননী সংস্কৃত যে সময় প্রকৃত অর্থে বিরাজ করত আপন মহা জগতে অর্থাৎ প্রায় বৈদিক যুগে , সেই হাজার বছর পূর্বে এক বিশেষ শ্রেনী ও তাদের অবস্থানকে এখানে নানা ভাবে আলোচনা করা হয়েছে । যার বা যাদের অবস্থান আজও একবিংশ শতকেও বিরাজমান । সেই বর্গের শুধুমাত্র সামাজিক রূপান্তর ঘটেছে কিন্তু তাদের পোশাকি নাম , যুগের বা কালের প্রবাহে আজও নানা চোরাগলি বা বিশেষ অঞ্চলে সীমাবদ্ধ । এখানে সেইসব অধুনা গালভারী এলাকা অর্থাৎ RED LIGHT AREA-র মানুষদের কথা বলা হয়েছে , যারা বৃত্তির কারনে আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে আধুনিক যুগের গন্ডীর মধ্যেও ছিলেন ।
সংস্কৃত তাদের কতটা সংস্কার
করেছে তা পরের বিষয় ! কিন্তু সংস্কৃত সাহিত্য থেকে শুরু করে সতন্ত্র বাংলা
সাহিত্যে এইসব গণিকারা রয়ে গেছে্ন কেবলমাত্র নানা ভাবে ,নানারূপে । সত্যিই আমরা এই
প্রায় তুচ্ছ মানুষদের কতটা জানি ? কতটা জানি তাদের অবদান ! পর্দার আড়ালে এই সব
মানুষদের রাখা হয় ঠিকই কিন্তু পর্দা উঠে যায় তখন , যখন তাদের আমরা ভোগের-বিলাসের
বস্তু হিসাবে দেখি ।
নারী হয়ত কোন কালেই প্রকৃত
সম্মান পুরোপুরি আদায় করে নিতে পারেন নি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ থেকে । কেবলমাত্র
গার্গী , মৈত্রী প্রভৃতি নারীদের উল্লেখ করে আমরা সোচ্চার হই । কিন্তু তাদেরও
স্থায়িত্ত কতটুকু ?
এটা কেবলমাত্র প্রাক আধুনিক
যুগের ভারত নয় , এটা সমগ্র বিশ্বের প্রায় একই মননশীলতা । গনিকারাও প্রাচীন ভারতীয়
সমাজের সাথে সাথে বিশ্ব দরবারে কেবলমাত্র পুরুষ দ্বারা লালসা মেটানোর সাধন ছিলেন
মাত্র । সাহিত্য যেহেতু সমাজ দর্পন সেহেতু এসব নারীদের সম্বন্ধে জানাটা আমাদের
একান্ত দরকার । নাহলে সাহিত্যের একটা বিশেষ দিক নিমজ্জিত থেকেই যাবে চিরকাল ।
প্রাচীন ভারতকে এখানে ঋগ্বেদের
যুগ থেকে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত পরিধি হিসাবে রাখলাম । এই পরিসরেই আমরা দেখে
নেব তৎকালীন সময়ে কেবলমাত্র বেশ্যা , কুলটা , শালভঞ্জিকা একত্রে “ গণিকা ”-দের অতি
সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত ।
বাংলা , ওড়িয়া , অসমিয়া ইত্যাদি
ভাষার আদিরূপ এসেছে সংস্কৃত থেকে । তাই আমাদের মাতৃভাষার আদিরূপ হল সংস্কৃত , যা
ভারতের আদিমতম ভাষার এক বিশেষ রূপ ; যদিও বর্তমানের অনেক গবেষককুল সংস্কৃতকে
ভারতীয় ভাষা বলে মেনে নিতে রাজী নন । নানা ব্যাখ্যার দ্বারা তারা প্রমান করতে
চাইছেন সংস্কৃতের আদি স্থান সোমালিয়া । যাইহোক , সেই বিতর্ক থেকে সরে এসে প্রাচীন
সংস্কৃত সাহিত্যে গণিকার ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞা তথা নানা নামের সাথে কিঞ্চিৎ পরিচিত
হই ।
ঋগ্বেদের [
৪/১৬/১৯/৩০ ; ৮/১৯/৯] শ্লোকে “গণিকা”
শব্দের বেশ কিছু নাম আমরা পাই । যেমন
হস্রা , অগ্রূ ইত্যাদি । এখানে মনে রাখার দরকার যে ঋগ্বেদ ভারতের প্রাচীনতম
সাহিত্য । অন্যদিকে অথর্ব বেদে এদের নাম আছে পুংশ্চলী হিসাবে । তাছাড়াও অন্যান্য নানা বেদ-শাস্ত্র-জাতক-সংহিতাতে গনিকাদের নানা নামের সাথে
পরিচিত হই । যেমন – রজয়িত্রী ( যে আনন্দ দেয় ),মুহুত্তিকা ( যে ক্ষণকালের সঙ্গিনী
) রূপদাসী , গামিনী , জনপদকল্যানী ইত্যাদি বহুরূপে ও নানাবিধ নামের মাধ্যমে ।
নামের মধ্য দিয়েই কিন্তু আমরা আরেক দিক উন্মোচন করতে পারি , তা হল , এদের সামাজিক
অবস্থান । উদাহরণ স্বরূপ , “ জনপদকল্যানী ” । যেন উক্ত শ্রেনীর নারীদের নামের মধ্য দিয়ে বলেই দেওয়া
হচ্ছে তাদের কাজ কী !
নদীর প্রবাহ যেমন থাকে না থেমে
ঠিক সেই রকম ভাবেই গণিকাদের পর্যায়বাচক নামের প্রতিশব্দ বেড়ে চলতে থাকে । মহাকাব্য
, পুরাণ , নানা ভারতীয় সাহিত্যে তাদের আমরা দেখা পাই – কুলটা , স্বৈরিণী ,
বারবনিতা এবং স্বাধীনযৌবনা নামের সমাহারে । প্রশ্ন বা ধন্ধটা হল যে নামের দ্বারা
এদের চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলি বেশ রসালো , মজাদার এবং এক স্বাধীন মনের নারীদের
যেন প্রতিভূ ! আদতে কী তাই ছিল !
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে উল্লেখ আছে
, পতিব্রতা হলে একপত্নী , স্বামী ছাড়া দ্বিতীয় পুরুষের প্রতি আসক্ত হলে কুলটা ,
তিনজনের প্রতি হলে বৃষলী বা পুংশ্চলী , চার থেকে ছয়জনের প্রতি আসক্তি থাকলে বেশ্যা
এবং তার বেশী হলে জুঙ্গী , পরিশেষে সাত-আট জনের বেশী কামারত হলে মহাবেশ্যা বলা হয় [
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ , প্রকৃতি খন্ড , অধ্যায় ২২৭-২২৮] ।
গণিকা সম্পর্কে আলোচনা করতে
গিয়ে একটা কথা মনে এসে যায় , এই গণিকা বৃত্তি কত কাল আগের তথা এর সামাজিক
প্রেক্ষাপটই বা কী ছিল ? নানা পুরাণ , তহা সাহিত্যের আনাচ কানাচ ঘুরে একটা জায়গায়
উপনিত হয়েছি । বর্তমান কালের ন্যায় পূর্বেও যৌথ পরিবার ভেঙে স্বতন্ত্র পরিবার যখন
সৃষ্টি হতে থাকে তখনই অলক্ষ্যে এই জীবিকা ভারত ও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পরতে থাকে ।
এর মূল কারণ , নারীর উপর যখন পুরুষের নানারূপ অধিকার তথাকথিত সমাজ মেনে নিতে শুরু
করেছিল ঠিক তখনই এর গোড়াপত্তন হতে থাকে । স্বতন্ত্র মনবৃত্তি আমাদের সকলের আছে ,
পূর্বেও ছিল । সেই মনভাবের বশবর্তী হয়ে নারী যখন অন্য পুরুষকে অর্থ বা বস্তু
প্রাপ্তির বিনিময়ে দেহদান করেন তখনই সে গণিকা হিসাবে পরিচিতা হন । উল্লেখ্য ,
গণিকা তখনই যখন নারী , দেহ বস্তুর বিনিময়ে দান করছে নিজ পুরুষ ছাড়া । বিষয়টি বর্তমান
যুগের আঙ্গিকে তর্ক সাপেক্ষ্য ।
আরেক ভাবে বিশ্লেষণ করা যাক ,
বিবাহ সম্পর্কের বাইরে বিবাহিতা বা অবিবাহিতা নারী যখন বিবাহিত বা অবিবাহিত
পুরুষের সাথে ইন্দ্রিয়সুখের অভিলাষে “মূল্য” রূপে অর্থ বা উপহার গ্রহণ করেন তখন
সেইটি “গনিকাত্বের” লক্ষণ অথবা তিনি নিয়মিত বৃত্তির জন্যই করে থাকুন । সুতরাং ,
“বিবাহবন্ধনের বাইরে” একটি নিয়ামক লক্ষণ এবং “মূল্যগ্রহণ” আর একটি , গণিকাবৃত্তি এ
দুটির দ্বারা চিহ্নিত । প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য , ঋগ্বেদের জার বা জারিণী , উপপতি
বা উপপত্নী অথবা অবৈধ পণ্যী বা প্রণয়িনী , মূল্য দান বা গ্রহণ অনুপস্থিত বলেই এই
সম্পর্ক গণিকা জীবিকার অন্তর্ভুক্ত নয় । নারী ঠিক কবে থেকে অন্য পুরুষের কাছে
মূল্যের বা শুধু তৃপ্তি লাভের জন্য দেহদান করতে থাকে তার সঠিক তারিখ পাওয়া যায় নি
। তবে নানা বিশ্লেষকদের মতামত অনুসারে এটা বলা যায় , সমাজে বিবাহ ও পরিবার
প্রতিষ্ঠিত হবার পর , নারী যখন স্বাতন্ত্র্যতা হারান [ সূত্র সাহিত্য অনুযায়ী –
“ পিতা রক্ষতি কৌমারে , ভর্তা রক্ষতি যৌবনে । রক্ষন্তি স্থবিরে পুত্রা ন স্ত্রী
স্বাতন্ত্র্যমর্হতি ।” অর্থাৎ পিতা , স্বামী , পুত্র নারীকে রক্ষা করে ; নারী
স্বাধীনতার যোগ্য নয়] । মূল বিষয়টা হল নারী যেন মুক্তির আলো দেখতে চান , পেতে চান নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় । যা তৎকালীন সময়ে অন্য ভাবে সম্ভব ছিল
না । ঠিক তখন নারী এই দেহ দান বৃত্তির পথটি বেছে নিতে থাকেন । সমাজে কিছু মানুষের
হাতে উদ্বৃত্ত বিত্তের সঞ্চয় যা সে জীবনধারণের তাগিদ মেটাবার পর বিলাসে সম্ভোগে
ব্যয় করতে পারে ।
তখনকার দিনে গনিকারা সামাজিক
স্বীকৃতি আদায় করে নিতে পেরেছিলেন । গণিকাদের নানা স্তর আছে । কেউ ধনী , কেউ
রাজা-মহারাজার জন্য আবার কেউ বা সাধারণ মানুষের দেহ সুখের জন্য আমোদে লিপ্ত হতেন ।
এবং সেই অনুসারে অর্থ উপার্জন করতেন । গণিকা রাষ্ট্র থেকে মাসিক ১০০০ পণ পেতেন ।
আরও গুরত্বপূর্ণ বিষয় হল রাষ্ট্র গনিকার দেহ সৌষ্ঠব তথা কাম লীলা শেখাবার জন্য
বিভিন্ন শিক্ষক নিয়োগও করত [ কামসূত্র] । তাও করা হত রাষ্ট্রর নিজের খরচায় । বৌদ্ধ সাহিত্যে দেখি গণিকা
সালাবতীর জন্যে তার মা সিরিমা এক রাত্রে ১০০০ কাহাপণ ( কার্সাপণ= সোনার মুদ্রা )
নিতেন [ ধম্মপদটীকা , পালি টেক্স্ট সোসাইটি , লন্ডন , ১৯০৬-১৮ , পৃষ্ঠা ৩০৮-৯]
, সামাজাতকে পড়ি , কাশীর গণিকা সামার ৫০০ অনুচারিনী ছিলেন [ জাতক ৩/৫৯-৬৩]
, এরাই সম্ভাব্য গণিকা দাসী । মৃচ্ছকটিকে পড়ি , বসন্তসেনাকে একবার নিয়ে যাওয়ার
জন্য দশ হাজার টাকার গহনা সমেত গাড়ী পাঠিয়েছিলেন রাজশ্যালক শকার । এমন নানা উদাহরণ
ছরিয়ে আছে প্রাচীন সাহিত্য তথা প্রাচীন সমাজের নানা প্রান্তে । অন্যদিকে বিশেষ শ্রেনীর দরিদ্র রমনীদের
গ্রাসাছ্বদনের জন্য গণিকা বৃত্তি আবলম্বন করতে হয় । আবার একটু সুক্ষদৃষ্টি দিয়ে
সমাজ বিচার করলে দেখতে পাওয়া যাবে যে , যেখানেই নগর-সভ্যতার পত্তন হয়েছে এবং কোন
কোন মন্দির সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠেছে সেখানেই দেবদাসীর জন্ম হয়েছে । মন্দির পুরোহিত
রাষ্ট্র থেকে যে বৃত্তি পেতেন তা দিয়েই তিনি দেবদাসীদের ভরণপোষণ করতেন , মাঝে
মধ্যে দেব সেবায় নিয়োজিত দেবদাসীরাও বৃত্তি পেতেন ।
দেবদাসী ও গণিকাদের মধ্যে একটি
বিশেষ পার্থক্য লক্ষনীয় । যারা শুধুমাত্র দেবদাসী তারা তরুণী , সুন্দরি অ নৃত্য
হলেই চলত , অপরপক্ষে , গণিকা বা রূপজীবারা শুধুমাত্র দেহ দান করলেই চলত না , তাদের
রীতিমত পাঠ গ্রহণ করতে হত । তাদের পাঠ্য তালিকাও ছিল বেশ দীর্ঘ । জৈন গ্রন্থ বৃহৎকল্পভাষ্যে
[ পুণ্যবিজয়জি ভাবনগর রচিত , ১৯৩৩-৩৮] উল্লেখ আছে গনিকারা গণিত , নানা প্রকার
শিল্প , বাদ্য-গীত , অক্ষ ক্রীড়া প্রভৃতি শিখতেন ।
সামাজিক স্বীকৃতির আরো নানা
উধাহরণ আছে , তারমধ্যে একটি বিষয় না লিখে
থাতে পারছি না , সেটি হল তৎকালীন সময়ে তারা রাষ্ট্রকে আয়কর দিতেন । এই করের
বিনিময়ে তারা সামান্য হলেও নিরাপত্তার সুযোগ লাভ করতেন । বর্তমানে একবিংশ শতকে
পুনরায় যে মর্যাদা এই বৃত্তির বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছে তার প্রচলন আজ থেকে বহু বছর
আগেই ছিল ।
শুধু তাই নয় , গণিকা কন্যাকে
যদি কেউ ধর্ষণ করত তাহলে সম মুল্যের অর্থ দন্ড করা হত । আবার প্রয়োজনে ধর্ষিতা
মেয়েটির বিবাহের সময়ে ধর্ষককে অর্থ সাহায্যও করতে হত । এর থেকে প্রমান হয় সেই যুগে
গণিকাদের সামাজিক সম্মান বর্তমানের তুলনায় অনেকটাই করা হত ।
অন্যদিকে , ভালোর সাথে
দুর্দশারও অন্ত ছিল না । যেমন , সরকারি সাহায্য পেলেও গণিকার মৃত্যুর পর তার
কন্যার অধিকারে মায়ের সম্পত্তি যখন আসত তখন সে-ও জীবনস্বত্তের আইন অনুযায়ী – বন্ধক
, বিক্রয় , দায় ও পরিবর্তন কিছুই করার অধিকার পেত না । রাষ্ট্রের বিপদে তার আয়ের অর্ধেক
সম্পত্তি নিয়ে নেওয়া হত [ অর্থশাস্ত্র ৫/২] ।
সমাজের একটা দিক গণিকা । আমি চেষ্টা করেছি তার উদ্ভব ও সামাজিক মূল্যায়ন
করার । তবে শেষ করার আগে আর কয়েকটি কথা না লিখলেই নয় । যে সমাজে নারীকে “সতী” বলে
সম্মানিত করা হয়েছে , সেই সমাজের পুরুষরাই যৌন লালসা তৃপ্তির জন্য এই বৃত্তিকে
আদিম কাল থেকে প্রশ্রয়ও দিয়ে এসেছে । অন্য দিকে নারীর সামান্য পদস্খলন হলেই তাদের
জন্য রুদ্ধ হয়েছে সমাজের জাবতীয় দ্বার । বিশেষত , সমাজ যেখানে প্রায় দু-হাজার বছর
ধরে নারীকে অর্থকারী শিক্ষার আলোক থেকে বঞ্চিত করেছে সেখানে তথাকথিত সৎপথে জীবন
ধারন করার আলো দেখাতে পারে নি । তাই এই বৃত্তি তাদের একমাত্র সহজ উপায় ছিল সামান্য
জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার । তারা দেহ দিয়ে অর্থ পেতেন বা পাচ্ছেন ঠিকই কিন্তু মানুষ
হিসাবে সমাজ থেকে পেয়ে আসছেন হাজার বছর থেকে অবজ্ঞা , ঘৃণা , লাঞ্ছনা ।
যতদিন রূপ যৌবনে তারা আসীন ছিল
তখন এক প্রকার জীবন গতি । কিন্তু যারা কুরূপা , বর্ষীয়সী তাদের জীবন আলেখ্য
অবর্ণনীয় । সেই সব বেশ্যার ভাগ্যে ছিল পুঞ্জিভূত অবজ্ঞা । এবং এরাই ছিল ও আছে
সঙ্খ্যায় বেশী । রোগে , শোকে , নিঃসঙ্গতায় , বার্ধক্যে , নিরাপত্তায় সব দিক দিয়েই
হয়ে থাকে অস্পৃশ্য । সমাজ নিজের স্বার্থেই এই বৃত্তিকে বাঁচিয়ে রেখেছিল কিন্তু
দায়িত্ব পালন সে দিক দিয়ে হাজার হাজার বছর ধরে করে নি । বরং কেউ এগিয়ে গেলে
সন্দেহের বাঁকা দৃষ্টি অবশ্যই সেদিনগুলিতেও যেমন ফেলতো , আজও ফেলে ।
সাহিত্যের নানা লেখনীতে তারা বিষয় হয়ে বহুবার উপস্থাপিত হয়েছে কিন্তু তাদের
জীবনকে সেই অর্থে কেউই প্রাধান্য দেয় নি , এটা কী প্রকান্তরে পরিহাস নয় ! ক’জন
জানতে চেষ্টা করেছেন তাদের রোজনামচা , বদ্ধ ঘরে অবরুদ্ধ কান্নার ইতিহাস !!
No comments:
Post a Comment