১
বিখ্যাত নন্দী বাড়ীতে যাতায়াত সেই
ছোট্ট থেকেই । এখানে বলে রাখি নন্দী পিসো দূর সম্পর্কের আত্মীয় হলেও নিজের
পিসোর চেয়ে কম আদর করতেন না । উনি বছরখানেক হল গত হয়েছেন । এখন
পিসির আদর খাওয়া আর মাঝে মধ্যে গিয়ে খবরাখবর নেওয়া আমার দায়িত্বের মধ্যে পরে গেছে । যাকগে , কাজের কোথায় আসি । পিসির
ফোন পেয়ে পরদিন সকালে আমার কাজ সেদিনের মত মুলতুবি রেখে বাইকে চেপেই রওনা হলাম ।
জানুয়ারি মাসের ঠাণ্ডা
জমিয়ে পরেছে এবার । তাই পৌঁছাতে একটু দেরী হল । সকালের
জলখাবার রাজকীয় ভাবে সারার পর পিসি আমাকে একটা চামড়ায় মোড়া ডায়েরী
গোছের খাতা ধরিয়ে দিয়ে বললেন , “ টুনু এটা তোর পিসোর । আমি
সেদিন ওর বইপত্তর ঝারাঝারি করতে গিয়ে একটা চিঠি পাই …।“জিজ্ঞাসু মুখ করে তাকিয়ে থাকতেই আমার মাথায়
হাত বোলাতে বোলাতে বললেন , “ ওটাতে তোর নাম লেখা আছে
, একবার পরে দেখিস ।“
“ স্নেহের টুনু
,
তারিখ – ০৬-১২-১৭
দুটি গাছের ফুল থেকে ওষুধ একটা বানাই। যার পোশাকি নাম ট্যানিফ্লোরাম রোডিওলা ; এতে মানুষের আয়ু কয়েকগুণ বেড়ে যাবে । এই ওষুধের প্যাটেন্ট একমাত্র আমিই জানি আর জানে প্রোফেসর
ডোনাল্ড । উনি দ্য সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্কে দীর্ঘকাল ভারতীয়
ভেষজ নিয়ে গবেষণা করছেন ।
আমার আবিষ্কারের বিষয়ে
উনিই প্রথম আমাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন । অন্যদের মত প্রোফেসর ডোনাল্ড এই বিষয় জানলেও তৈরী করার প্রণালী
জানেন না , জানতে চানও নি । আমি
ওর কাছে ৬ লাইনের একটা ধাঁধাঁ রেখে গেছি ।
আমার কিছু হলে নিজের পরিচয় দিবি আর তোর পিসির কাছে একটা চাবি
আছে যা তোকে সাহায্য করবে , ওটা নিবি ।
ভালো থাকিস ।
তোর পিসো
ডঃ বঙ্কু বিহারী নন্দী ।
পুনশ্চ ঃ- ধাঁধাঁ সমাধান করতে পারলে তুইই হবি তার উত্তরাধিকারী
।
২
আমি
রোহিতাশ্ব রায় , প্রানী
বিদ্যায় ডক্টরেট শেষ করে কলেজে এক বছর হল জয়েন করেছি । বন্ধুরা
সংক্ষেপে রোহিত বলে ডাকে । এত তাড়াতাড়ি নিউ ইয়র্কের ভিসা পাওয়া মুশকিল , তবে পেলাম কিছুদিনের টুরিস্ট ভিসা । আগেভাগে
প্রোফেসর ডোনাল্ডকে বিষয়টা সংক্ষেপে জানিয়েছি । তার
উদার মনের পরিচয় পেলাম তখনই যখন জানালেন
“ মাই ডিয়ার কাম সুন অ্যান্ড স্টে উইথ মি । আমারও
বয়েস হয়েছে যথেষ্ট , জাস্ট ফুলফিল দ্য ড্রিম অফ ইউর আঙ্কেল …।”
আগে কোনদিন বিদেশের
মাটিতে পা দেই নি । কলকাতা থেকে জেট এয়ার ভায়া মুম্বাই হয়ে দীর্ঘ বারো হাজার
কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিয়ে যখন জন এফ কেনেডি বিমান বন্দরে নামলো তখন নিউ ইয়র্কে গোধূলির
লালিমা । প্রোফেসর ডোনাল্ড গাড়ী পাঠিয়ে দিয়েছেন । চেকিং
পর্ব শেষ করে বাইরে আসতেই দেখি একটা হাত আমার ছবি আর নাম লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে অপেক্ষা
করছে । পরিচয়ে
জানলাম দীর্ঘদেহী ছেলেটি আফ্রিকান-আমেরিকান । সাত সমুদ্র তেরো নদী পারের এক অতি উন্নত শহরের বুকে দাঁড়িয়ে
ছেলেটির নামটা শুনে বেশ তাজ্জব হলাম
, অ্যাবিনুশ । মজা পেলাম মনে মনে
, মনে হল খুব কাছের একজন মানুষকে পেয়ে গেছি । আমি
মুচকে হেসে বললাম ,” তোমাকে অবিনাশ বলে ডাকলে অসুবিধা নেই তো ?” “ নো স্যার
ইউ মে…” সংক্ষিপ্ত কথার মাঝেই গাড়ী স্পীড তুলল । গাড়ী
চালাতে চালাতে অবিনাশ জানালো , “ আপনি তো লেট প্রোফেসর ব্যাঙ্কুর আত্মীয় , হি ওয়াস মাই
ডিয়ার পারসন । ভীষণ নলেজ । স্পেশালি যখন আফ্রিকান-আমেরিকানদের ইতিহাস ও অত্যাচার নিয়ে বলতেন তখন মনেই হত না যে
উনি বিজ্ঞানের মানুষ ।“
কথাটা ভুল বলে নি
অবিনাশ । এই দেশে কালো আর সাদার পার্থক্য অনেকটাই প্রকট হয়েছিল । পিসো
একবার গল্প করতে করতে বলেছিল ১৯২০ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত আমেরিকার
পাবলিক সুইমিং পুলে কালোদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ ছিল । পরবর্তীকালে
ষাট ও সত্তরের দশকে জন কেনেডি , রিচার্ড নিকসন এবং রোনাল্ড রিয়েগান রাষ্ট্র নায়কদের প্রচেষ্টায় এই ঘৃণ্য বিভাজন
বন্ধ হয় ।
ঘড়িতে দেখলাম প্রায়
আটত্রিশ মিনিট অতিক্রান্ত । লোয়ার ম্যানহাটন ক্রশ করে খানিকটা এগোতেই লিওন্যার্ড স্ট্রিট
। গন্তব্যে
এসে গেছি । অভ্যর্থনা জানালো মিসেস নালা , প্রোফেসর রোনাল্ডের কেয়ারটেকার । বছর
পঞ্চান্নর মহিলা মিষ্টি হেসে আমাকে ভিতরে ডাকলেন এবং জানালেন প্রোফেসর হাডসন নদীতে
মাছ ধরতে গেছেন, খানিক পরেই চলে
আসবেন । কথায় কথায় ভদ্রমহিলা জানালেন অ্যাবিনুশ তারই ছেলে , পড়াশনায় ভালো । এখানকার
প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে পড়ে ।
৩
বেশ শীত এখানে । প্রোফেসর
সখের মাছ ধরে চলে এসেছেন কিছুক্ষণ আগেই ।
আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম । ডিনার
খেতে খেতে প্রোফেসর বললেন , “ ওয়েল মাই বয় উই উইল টক টুমারো …এখন ফুল রেস্ট নাও ।“ দেখলাম খানিক ন্যুব্জ হয়ে গেছেন বয়েসের ভারে ।
ঘুম ভাঙল খানিক বেলা
করেই । ঝকঝকে
নীলাকাশ । বাংলো টাইপের ঘরের সামনেই সবুজ গালিচার মত ঘাস । সামনের
চেয়ারে গিয়ে বসতেই প্রোফেসর নিজের হাতে কোকো বানিয়ে দিলেন । স্বাদটা
বেশ তিতকুটে কিন্তু ঠাণ্ডার জন্য ভালো ।
আমার মুখের অবস্থা দেখে বৃদ্ধ হো হো করে হেসে ফেললেন । হাসি
থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন , “ তোমাদের মুখে চা সেট করে গেছে , তোমার পিসোও পছন্দ করতেন
না জানো ।বাই দ্য ওয়ে যে কারনে তোমার আসা …।”
আমি মাঝ পথেই বললাম , “ স্যার , ওটা আসলে
কী ? কারণ ওই নামে তো সায়েন্সে এখনো কিছু নেই !”
-
“
আসলে ওই লিকুইডটা দুটো ভারতীয় ভেষজের অদ্ভুত মিশ্রণ । তোমাদের পরিচিত অথচ তিনি এমন
এক জৈব আবিষ্কার করলেন যা তার মতে মানুষের আয়ু বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে ।“
-
কোন
পরীক্ষা করেছিলেন ? না , অনুমান ! কারণ আমি যতদূর জানি
টেলোমারেস আয়ু বৃদ্ধির জন্য অনেকটাই দায়ী ।“
-
“ রাইট
মাই ডিয়ার । প্রোফেসর নন্দী ইঁদুর , ড্রসোফিলা জাতীয় একধরণের মাছির দেহে ট্যানিফ্লোরাম রোডিওলার
লিকুইড ইঞ্জেক্ট করে সুফলও পান ।“
বৃদ্ধ ডোনাল্ড চেয়ার
থেকে উঠে এগিয়ে এসে আমার কাঁধে হাত রেখে বলেন
, “ ভাবছো মানুষের দেহে প্রয়োগ হয়েছে কিনা তাই তো !” আমি ওনার দিকে নির্বাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলাম । প্রোফেসর
বাঁধানো ঝকঝকে দাতে এক টুকরো হাসি হেসে বললেন
, “ মাই বয় তোমার পিসোর ইচ্ছা ছিল এই পরীক্ষাটা আমার উপরে করার কিন্তু…”
কথাটা না শেষ করেই আকাশের দিকে আঙুল দেখালেন ।
-
“ আপনি
কী চান স্যার ?”
-
“ আমি
। তুমি করতে পারবে আমার উপর ? দেখো যদি আরও কিছু বছর বেঁচে যাই ।“
কথাতে এতটাই মশগুল
যে খেয়াল করি নি অবিনাশ এসে হাজির । চোখাচোখি হতেই অবিনাশ হাতে রাখা ব্রেকফাস্টের ডিশ দুটো টেবিলের
উপর রাখলো । বুঝলাম ও খানিক আগেই এসেছে কিন্তু কথার মাঝে কোন বাধা দিতে
চায় নি । অথচ আমার মনের মধ্যে কেন জানি না ওর উজ্জ্বল চোখ দুটো বারবার
ঘুরেফিরে আসছিলো । প্রোফেসর ডোনাল্ডের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো , “ আজ বাইরে যাবেন তো , গাড়ী কী রেডি করবো ?”
প্রোফেসর কথার
ঘোরে ছিলেন । কিছুক্ষণ পর বললেন
, “ উমম্ কিছু বললে …হ্যাঁ
…না আজ বরং বাদই দাও ।
কেন জানি না কদিন ধরে শরীরটা ঠিক যাচ্ছে না ।“
“ওষুধটা খেয়ে নিন
ভাল লাগবে “ বলেই অবিনাশ নিজের পকেট থেকে কালচে গোল ট্যাবলেট
বার করে দিল । প্রোফেসরের চোখেমুখে একটা বিরক্তির ছাপ , “ইটস্ নট ওয়ার্কিং,ডাক্তার ডাকো ।“ বলেই
বৃদ্ধ নিজের ছড়িতে ভর করে ঘরের দিকে পা বাড়ালেন । খানিকটা
গিয়েই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন , “ ডিয়ার আজ রাতে কিন্তু করতেই হবে ।“ প্রোফেসর চলে যেতে আমি অবিনাশকে জিজ্ঞাসা করলাম , “
এটা কী ওষুধ ?”
“ স্যার এটা ভেষজ
ট্যাবলেট বাট …ওকে আই উইল কল ডক্টর ।“ কথাটা সেরে খানিকটা ক্ষোভের সাথে মাথা নাড়াতে নাড়াতে বাইরে
বেড়িয়ে গেল লোহার পেল্লাই দরজা খুলে । আমিও
একটু অবাক হলাম ওর ব্যবহারে , অদ্ভুত পরিবর্তন ।
৪
প্রোফেসর সেই রাতে
আরও দুর্বল হয়ে পরলেন । ডাক্তার আসলেন কিন্তু ঠিক ধরতে পারলেন না । তিনি
বারবার তাকে ভর্তি করার কথা বলেও রাজী করাতে পারলেন না , অবশেষে কয়েকটা ওষুধ লিখে দিলেন । প্রোফেসরের
চোখ দুটো বন্ধ , গায়ের রঙ ফ্যাকাসে
কালচে । অবিনাশ দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গেল ডাক্তারকে । মিসেস
নালা আফসোসের সুরে আমাকে বললেন , “ওর এই একটা সমস্যা , কিছুতেই হসপিটালে ভর্তি হতে চান
না । শরীর খারাপ করলেই অ্যাবিনুশকে নিজের ল্যাবরেটরি থেকে
ওষুধ আনতে বলেন আর সেটাই খান ।“
শুনে আমি বললাম,
“ মিসেস নালা মে আই সি দ্য ল্যাবরেটরি প্লিস ।“ মাথা নাড়িয়ে ভদ্রমহিলা সম্মতি
প্রকাশ করলেন । আমি তার পিছু পিছু কয়েকটা ঘর ছেড়ে খানিকটা দক্ষিণ দিকের অপেক্ষাকৃত
বড় একটা হল ঘরে ঢুকলাম । মিসেসে নালা আমাকে ল্যাবরেটরি দেখিয়ে বেড়িয়ে গেলেন ।
নানান যন্ত্রপাতিতে ঘর ঠাসা ।
হঠাৎ একটা বয়ামের
দিকে আমার নজর যায় । কাছে গিয়ে দেখি ভিতরে একটা সন্দপ লবণের মত একটা সাদা স্ফটিক ।
কাঁচের উপর লেখা – পিউরিন মিথাইল জ্যান্থিন এলকালয়েড । এ যে ক্যাফিন ! আকস্মিক প্রোফেসরের ক্ষীণ আর অ্যাবিনুশের
চীৎকারে ছুট লাগালাম । বেডরুমের দরজা হাট করে খোলা । মিসেস
নালা অ্যাবিনুশের একটা হাত ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন । খাটের
নীচে মোটা গালিচার উপর পরে আছেন প্রোফেসর ।
দৃশ্যটা দেখে
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম । সেদিনের সেই শান্ত ছেলেটির চোখ দুটো লাল , শরীরে মনে
হচ্ছে কোন আদ্ভুত প্রানী ঢুকে ওকে হিংস্র করে ফেলেছে । কিন্তু ওটা কী ডান হাতে ? কাছে
যেতেই লক্ষ্য করলাম একটা ইনজেকশনের সিরিঞ্জ , তাতে হাফ কালচে সবুজ তরল । অবিনাশ
পরে থাকা প্রোফেসরের শরীরে সিরিঞ্জটা ঢোকানোর জন্য হাঁটু গেড়ে ঝুঁকে পরলো । আমি
মুহূর্তের মধ্যে ওকে সজোরে একটা ধাক্কা মারতেই অত বড় শরীরটা ছিটকে পড়ল কাঁচের
টেবিলের গা ঘেঁষে ।
অশতিপর
প্রোফেসরকে হাত দুটো ধরে বেশ কষ্ট করে বিছানার উপর বসালাম । ওর মুখে চোখে এখনও
একটা আতঙ্কের ছায়া । অদূরেই মাথা গোঁজ হয়ে বসে ছিল অবিনাশ । আমি ওর দিকে এগিয়ে ঝাঁঝিয়ে
বললাম , “ জানো এর জন্য তোমার জেল হতে পারে ! আর আমি পুলিশ ডাকবোই ।“
অদ্ভুত ব্যাপার
পুলিশের কথা শুনেও অবিনাশ চোখে কোন ভয়ের লেশমাত্র দেখতে পেলাম না বরং শান্ত ভারী
গলায় বলল, “ইউ মে স্যার । আমি আমার প্রটেষ্ট করবোই ।“
“ কিসের প্রটেষ্ট
? একজন বৃদ্ধ মানুষকে আঘাত করে কোন আন্দোলন হয় না , আদালত তোমার এই অনুভূতির কোন
মুল্য দেবে না ।“
“ লিভ হিম মাই বয়
। ওর এই রাগ অনেককালের। আর এর জন্য দায়ী আমাদের সাদা চামড়ার আমেরিকানরাই । একটা
সময়ে ওদের আমরাই বঞ্চিত করেছিলাম ।ও যখন
ছোট ছিল তখন ওর বাবা মারা যান। কারণ
কী জানো ?”
আমি মাথা নাড়িয়ে
না জানালাম । প্রোফেসর বললেন , কালো চামড়ার কয়েকজন সুইমিং পুলে নেমেছিল কিন্তু
তারা আর উঠতে পারে নি । মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল বিষ । আর যারা উঠেছিল তাদের কয়েকজন
পক্ষাঘাতে তিলে তিলে বেঁচে থাকে । মৃতদের
মধ্যে ওর বাবাও ছিল ।“ এত কথা বলার পর প্রোফেসর ডোনাল্ড হাঁপাতে থাকেন । মিসেস
নালা তার মাথার কাছে বসে সাদা চুলে হাত বুলিয়ে দিতে থাকেন ।
“ অবিনাশ কী ছিল
তোমার সিরিঞ্জে , তাড়াতাড়ি বল । কী ইঞ্জেক্ট করেছো ?”
“ আমি বলি , ওটা
ছিল হাই ডোজের ক্যাফেন । ব্যাথা কমার জন্য আমি ওকে মাঝে মধ্যে ঠিক মাপ করে দিতে
বলতাম কিন্তু আজ ...” কথাটা বলে প্রোফেসর অ্যাবিনুশের মুখের দিকে তাকায় ।
“ আই এম সরি ড্যাড
“ কাঁদতে থাকে অ্যাবিনুশ ওরফে অবিনাশ ।
আমার অবাক হওয়ার পালা
। এতক্ষণ
পর মিসেস নালা মুখ খোলেন । ভদ্রমহিলার ঠোঁট তিরতির করে কাঁপছে “ ওর বাবা মারা যাওয়ার সময় ওর বয়েস খুবই অল্প
। পেট চালানোর জন্য প্রোফেসর ডোনাল্ডের কাছে আসি । উনি
আমাদের আশ্রয় দিলেন এবং এক বছরের মাথায় আমাকে বিয়ে করেন । অ্যাবিনুশকে
নামী স্কুলে পড়ানও । ওকে নিজেদের জাতির উপর ক্ষুব্ধ হতে আমি দেখেছি । উনি
বলতেন এটা অন্যায় কিন্তু অ্যাবিনুশ নিজের অতীত কখনই ভুলতে পারে নি ।“
অ্যাবিনুশের দিকে
তাকিয়ে আমি শান্ত গলায় জিজ্ঞাসা করলাম
, “ যিনি তোমাদের এত উপকার করলেন তাকেই মারতে চাইলে ?”
অ্যাবিনুশ আমার দিকে
হতাশা আর ক্ষোভ মেশানো গলায় বলল , “ স্যার যখন শুনলাম ট্যানিফ্লোরাম রোডিওলার লিকুইড ইঞ্জেক্ট করে ওর আয়ু বাড়াবেন
তখন নিজেকে স্থির রাখতে পারছিলাম না । কারণ
ওরা আমার বাবাকে হত্যা করেছে , ওকে আর বাঁচতে দেব না ।“
দিন সাতেক কাটানোর
পর কলকাতার জন্য এয়ারপোর্টে এলাম । এখন আমার প্লেন মেঘের আস্তরণ কাটিয়ে চলেছে । না
আমি সেই ওষুধের তৈরী করার প্রণালী নেই নি ।
নির্দিষ্ট চাবি ঘুড়িয়ে প্রোফেসর বার করেছিলেন সেই ধাঁধাঁর
কাগজটি । অ্যাবিনুশকেও আমি ডেকে নিয়েছিলাম । ও
দেখার কিছুক্ষণ পরেই আমাকে অবাক করে উত্তর দেয় । প্রোফেসর
আর মিসেসে নালার কাছে আমি কৃতজ্ঞ কারণ তাদের ছেলে এনিংমাটোলজিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও এতকাল
বুক দিয়ে আগলিয়ে রেখেছিলেন কাগজটা ।
যাওয়ার সময় প্রোফেসরকে
ডেকে বলেছিলাম যে সকল ব্ল্যাক আমেরিকার সেই শারীরিক ক্ষতির মুখে আজও মৃত প্রায় তাদের
জন্য ওটা ব্যবহার করতে । আমি চোখ বন্ধ করে চিন্তা করতে লাগলাম সেই ধাঁধাঁটার –
“ দেঁহু তুলসী এক রতি নারায়ণ হৃদে
,
রাধা নাম গাহি পাপ মুকত ধরণীতে ।
হনুমান আনি লেপিলো সাতেক রতি সঞ্জীবনী ,
মৃত লক্ষ্মণ দেহে হইল লক্ষণ তীব্র এক জীবনী ।
মুই অধম বঙ্কু টেলোমিয়ার বক্ষে ,
সমুদ্র পারে রাখি গুপ্ত এক কক্ষে ।।“
No comments:
Post a Comment