১
“রোহিতাশ্ব রায় বলছি… ও স্যার আপনি , নতুন নাম্বার ঠিক বুঝতে পারি নি
… কী দরকার কাজের… ওকে স্যার আমি আজ না হয় কলেজের
পর সন্ধ্যে নাগাদ যাচ্ছি…হুম সিউর স্যার…” কথাটা শেষ করেই ফোনটা রেখে দিলাম । মা রান্নাঘর থেকে গজগজ করছে , বুঝলাম
আজ সন্ধ্যেবেলায় নন্দী পিসির বাড়ীতে যাওয়া ক্যানসেলের আভাস পেয়ে বেজায় চটেছে ।
অলরেডি ঘড়ির কাঁটা বলছে সকাল ন’টা । খাবার থালা ডাইনিং টেবিলে নামিয়ে মুখ ভার করে
পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো । খেয়ে স্নান করার উল্টো অভ্যাস আমার বরাবরের । ভাত মাখতে
মাখতে মায়ের দিকে তাকিয়ে হাল্কা হেসে বললাম “ চট করে চটে যাও কেন বল তো । তোমাকে
পিসির বাড়ী নামিয়েই আমি নাহয় প্রোফেসর আলেকজেন্ডারের সাথে দেখা করে আসবো ।“
বিকাল চারটের সময়
তৈরী হয়ে থাকার কথা বলেই ঝটপট বেড়িয়ে পরলাম । কলেজ আমার বাড়ী থেকে বাইকে দশ
মিনিটের রাস্তা । প্রশস্ত রাস্তা , গাড়ী চালিয়ে আরাম । গাড়ী চালাতে নানা কথা ভাবতে
বেশ লাগে , যদিও উচিৎ নয় তবে সব উচিৎ কী আমরা মেনে চলি ! ডঃ আলেকজেন্ডার স্মিথের
সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল বছর আটেক আগে নন্দী পিসোর হাত ধরেই । নামটা শুনেই আমি পিসোর দিকে তাকিয়ে থাকতেই মৃদু ধমকের সুরে
বলেছিলেন , “ টিপিক্যাল মেন্টালিটি যে একমাত্র বাঙালীর পৈত্রিক সম্পত্তি ভাবাটা
অনুচিত টুনু । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজনরেই কুক্ষিগত থাকতে পারে নাকী !”
সন্ধ্যে ছটার সময়
মাকে পিসির জিম্মায় রেখে প্রফেসরের সাথে দেখা করে এলাম । কিন্তু মুডটা রীতিমত
খারাপ হয়ে গেল । মাকে গাড়ীতে তুলতেই পিছন থেকে পিসি বললেন , “ টুনু তোর পিসো বলতেন
কাজটা যখন কঠিন হয় তখন বেশী করে হাসতে হয় । করে দেখিস ,মনে জোর পাবি , যা সাবধানে
বাড়ী পৌঁছে ফোন করে দিস ।“
গাড়ীর পিছনে বসে
মায়ের কথা বলাটা অভ্যাস , তবে আজ আমার মুখ দেখে বিশেষ কিছু বললেন না । শুধু আস্তে
করে কাঁধে রাখা হাতটা একটু চাপ দিয়ে বললেন , “ তোর পিসো কিন্তু ভুল বলেন নি , করে
দেখিস ।“ সত্যি পিসো ,বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের পদে পদে কত কিছুই না শিখিয়ে
গেছেন কিন্তু সেই মানুষটাও আজ এ পৃথিবীতে নেই ।
২
তুষার তুহিন রায়ের শরণাপন্ন মাঝে মধ্যেই হতে হয় ভিসার জন্য । এবারও হলাম ।
বেচারা ঠোঁট কামড়ে , “ আমি তো বাংলাদেশ হাই কমিশনারে , ওকে দেখছি তবে তাড়া মারবি
না বলে রাখলাম “ বলেই টুকটাক করে মোবাইলে কার সঙ্গে কে জানে কথা শেষ করে আমার দিকে
তাকিয়ে ফের বলল , “ দিন পাঁচেক মিনিমাম , দেখি তার আগে হয় কিনা ! তোর তো সব তাতেই
উঠলো বাই তো যেখানে ইচ্ছা যাই ।“
কয়েকদিন পর আলেকজান্ডার স্মিথের স্পন্সশিপে রাতের সরকারী ফ্লাইটে গা এলিয়ে
দিলাম । ব্যাঙ্গালুরু হয়ে হিথরো । দুনিয়ার অন্যতম ব্যাস্ত এয়ারপোর্ট হিথরো ।
হোটেলে ওঠার কথা শোনা মাত্রই প্রোফেসর সেই প্রস্তাব বাতিল করে দিলেন । ড্রাইভার
চিসইক ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে হুসহুস করে গাড়ী চালিয়ে চলেছে । খানিকটা এগোতেই অদূরেই
থেমস্ নদী সাপের মত একেবেকে চলছেন নর্থ সি’তে মিশে যাওয়ার অভিপ্রায়ে । কখনো কাছে আবার নিমেষেই দূরে । ফুলহামে আলেকজান্ডার
স্মিথস্ বাংলো । বড় না হলেও ছিমছামের মধ্যে সুন্দর
নান্দনিকতা । বাড়ীর গায়ে একতারা, দোতারা হাতে নানা আকৃতির বাউলের মেঠো কাজ ।
তাজ্জব হয়েছি দেখে প্রোফেসর হেসে বললেন , “ আসলে কী জানেন আমার ঠাকুরদা রবীন্দ্র
অনুরাগী ছিলেন , শুনেছিলাম বার দুই তিন আপনাদের শান্তিনিকেতনে রবি ঠাকুরের সাথে
দেখাও করেছিলেন ।“ গল্প শুনতে শুনতে ড্রয়িংরুমে বসলাম । সুন্দর পেয়ালায় চা হাতে
হাজির মিসেস স্মিথ । চুলের আর মুখের
গড়নে এখানকার ছাপ থাকলেও কিছুটা অগোছালো শাড়ী পরা দেখে হাতে ওঠানো চায়ের কাপটা
হাতেই থেকেই গেল । মিসেস স্মিথ সামনের সোফায় হাসি চেপে রেখে বসলেন আর ভাঙা বাঙলায়
বললেন , “ মশাই চা খান । ও হ্যাঁ আমার নাম অনুরাধা মুখার্জী । অবশ্য বিয়ের পর
স্মিথ , অনেক বছর হল এখানেই ।“
লন্ডনে এখন বেশ ঠাণ্ডা । প্রোফেসর
চা না খেয়ে গ্লাসে পানীয় ঢেলে বললেন , “ আসলে ও আর আমি একই কলেজ থেকেই ইতিহাস নিয়ে
পি এইচ ডি করেছি আর শেষে বর্তমান পরিনতি ...।” সেদিন আর বেশী কথা হল না । এখানে
এখন দুপুর ১ টা অর্থাৎ ভারতে মাঝরাত
পেরিয়েছে । ঘুমঘুম পেতেই অনুরাধা খাঁটি বাঙালী রান্না খাইয়ে সোজা ঘুমাতে যেতে
বললেন । ঘুম ভাঙল বেশ রাত করেই । উইকেন্ড , সুতরাং রাতেই আড্ডা জমে উঠলো ।
প্রোফেসর নিজের স্টাডি রুমে আমাকে বসিয়ে দরজা এঁটে দিলেন । খানিকক্ষণ আমার দিকে
তাকিয়ে বললেন ,” ডঃ নন্দী আমার বিয়ের কথাটা জানতেন না বুঝলেন আর ওনাকে এই ব্যাপারে
যে এখানে ডাকবো তখন তেমন কিছুই ঘটে নি । নেচার পত্রিকায় গত বছর আপনার একটা লেখা
পড়েছিলাম । মাস দুয়েক আগে এমন একটা ঘটনা উদ্ধার করি যার জন্য আপনাকে ডেকে পাঠানো ।
আই থিংক ইউ ডিড নট মাইন্ড ।“ শেষের দিকে ওর গলাটা বেশ নরম হয়ে গেল ।
আমি বললাম , “ ভালোই হয়েছে , আপনার দৌলতে লন্ডনে পা তো রাখতে পারলাম তাছাড়া
টিকিটও আপনি কেটে দিয়েছেন , নইলে একজন সাধারণ প্রোফেসরের পক্ষে নির্বান্ধব দেশে
আকস্মিক আসাটা একটু মুশকিলের ।“ খানিক থেমে আবার বললাম , “ বিষয়টা কী এবার বলুন
স্যার ।“
রোলিং চেয়ারে পিঠ টানটান করেই আবার টেবিলের অপর প্রান্তে ঝুঁকে আমার দিকে
চেয়ে বললেন , “ আমি একজন এট্মোলজিস্ট । কলেজে পড়ানো ছেড়ে বছরখানেক লন্ডন ব্লুমস্বেরির
ব্রিটিশ মিউজিয়ামের থার্ড ফ্লোরে যে আটটি মমি আছে তাদের দেখভাল ও অধ্যয়নে আছি ।“
ছোটবেলায় পরেছি এই বিখ্যাত মিউজিয়ামটি আইরিশ ডাক্তার ও বিঞ্জানী স্যার
হান্স স্লোয়েন ১৭৫৩ সালে নির্মাণ করেন ,পরে ১৭৫৯ এ দীর্ঘ পরিশ্রমের পর প্রথম
জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় । কিছুক্ষণ আগেই অলেভিয়া কাজের মহিলা বিয়ার দিয়ে গিয়েছিল । প্রোফেসর স্মিথের গলার আওয়াজে বহুকালের মন হারানোর
অভ্যাসটায় ব্যাঘাত পড়ল । আমি ওর দিকে চেয়ে বললাম , “ হুম বলুন ডক্টর , কী হয়েছে
সেখানে আর আমি কিই বা সাহায্য করতে পারি ?”
“ আসলে আপনার আঙ্কেলের সাথে ওর জীবনের প্রায় অন্তিম লগ্নে আমার প্রায় কথা
হত , পন্ডিত মানুষ । নানা আবিষ্কারের মধ্যে যেটা ছিল সেটা আপনি তো রোনাল্ড আর অ্যাবিনুশের
জিম্মায় ছেড়েই এসেছেন “ বলেই মুচকি হাসি হাসলেন ।
“ বাই দ্য ওয়ে ট্যানিফ্লোরাম রোডিওলার কথা আপনি জানেন !” অবাক হয়েই কথাটা
বলে ফেললাম ।
“ না জানার তো কিছু নেই , বিঞ্জানের এত বড় আবিষ্কার নিউ ইয়র্ক থেকে লন্ডন
সহ তামাম দেশের নিউজে ছড়িয়ে পরেছে । শুধু
তাই নয় ভারতের নামও উজ্জ্বল হয় মানব সেবার জন্য । কত রুগ্ন মানুষ ওই ওষুধে উপকৃত
হচ্ছে ।“
“ প্রোফেসর কাম টু দ্য পয়েন্ট , আশাকরি ট্যানিফ্লোরাম রোডিওলা আপনার বিষয়
নয় ।“ কথাটা ঘোরাবার জন্য মুখ ফস্কে বেড়িয়ে গেল । থতমত খেয়ে প্রোফেসর মুখ খুলতেই
মিসেস স্মিথ ঘরে ঢুকলেন ।
রাতের খাবারের পর আজকের মত আসর শেষ । নরম গদির বিছানায় পরতেই নানা প্রশ্ন
মাথার মধ্যে ঘুরপাক দিতে লাগলো । মিসেস স্মিথ বাঙালী অথচ শাড়ী পরার ধরন ! বাংলা
কথা , রান্না ! প্রোফেসরের আসল উদ্দেশ্য কী ? ট্যানিফ্লোরাম রোডিওলা ! নাহ ! মমির
বিষয়ে কিছু বলতে চাইছিলেন মনে হল । একটা বিষয় রোহিতাশ্ব রায় মানে আমি ব্যাগে নানা
কাজের সাথে একফাইল ট্যানিফ্লোরাম রোডিওলা রেখে দেই , কে জানে কোথায় কী কাজে লাগে ।
এবার সাথে নন্দী পিসোর অসমাপ্ত কাজ । যদিও এবারে সেই আবিষ্কারকে আমিই সমাপ্ত করেছি
।
রাতে কথা থেকে একটা হাল্কা
কান্নার আওয়াজে ঘুমটা মাঝে ভেঙে গেছিল কিন্তু ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানা থেকে উঠতে পারে নি ।
৩
সুবিশাল প্রাসাদ
বর্তমানের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম । রুম নং ৬৩ ঘুরে ৬২ তে এলাম । প্রোফেসরে
একটি কাঁচের বক্সের দিকে নিয়ে গেলেন । শায়িত মমিটির দৈর্ঘ্য ৪ ফুট ১ ইঞ্চি । আটটি
মমির মধ্যে মোট তিনটি মমি মহিলার । এটি সেই তিনজনের মধ্যে একজন । প্রোফেসর স্মিথ
আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললেন , “ প্রোফেসর রায় এর বয়স সাত , সিঙ্গার ছিল , নাম জায়াসেতিমু । খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ শতক অর্থাৎ ফেরাওএর রাজত্বকাল তখন ...।”
আমি মুগ্ধ হয়ে
দেখছিলাম , হায় রে ভাগ্যহীনা জায়াসেতিমু কোন আঘাতে অকালেই ঝরে পড়ল সে ? তার খোঁজই
বা রাখে ক’জন ?
“ ডঃ স্মিথ এই
মিউজিয়ামের লাইব্রেরী তো পৃথিবী বিখ্যাত , দেখতে পারবো কী ?”
“ সরি রায় । আজ
বন্ধ , তবে সেই সম্পর্কে আমি কিছু বলবো । সামনেই কফি শপ ...চলুন ।“
অস্টন রোড ক্রশ
করিয়ে পূর্ব-উত্তর দিকে কিছুটা এগোলেই
স্টারবাক্স কফি হাইস । রিসেপসন কাউন্টারটি সাদা-কালো মার্বেলে
অর্ধচন্দ্রাকারে বাঁধানো । ডঃ স্মিথ দুটো এসপ্রেসো ভেন্টি অর্ডার দিয়ে আসলেন ।
খানিক বাদেই এক মহিলা হাসি মুখে পরিবেশন করে গেলেন । প্রোফেসর আমার দিকে তাকিয়ে
বললেন , “ এটা আমার প্রিয় কফি শপ বুঝলেন , দেয়ার আর ভ্যারাইটিস অফ কফি , খেয়ে
দেখুন । এটা আসলে ফ্র্যাপুচিনোর ভেরিয়েশন ।“ সত্যি বলতে আমার এত ঞ্জান নেই ।
রেস্টুরেন্টে খুব একটা যাইও না , নিজের
গবেষণার মধ্যেই ডুবে থাকতে বেশী স্বচ্ছন্দ । মুখে দিলাম ,অতি মাত্রায় চকলেট আর কফি
। সত্যি বলতে কী ভারতীয়দের পোষাবে না । এখানকার আবহাওয়ায় এগুলো মানায় । নিউ
ইয়র্কের কথা মনে পরে যায় । চুপচাপ পান করতে করতে আমি প্রোফেসরের দিকে তাকিয়ে বললাম
, “ নাও স্যার প্লিস টেল মি দ্য রিসন ? এখানে আমি কী জন্য ?”
“ ওয়েল ফ্রেন্ড ,
আপনার আঙ্কেল একবার আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছিলেন ঈশ্বর তত্ত্ব একদিকে রেখে যদি
বিজ্ঞানের আলোয় বিচার করি তাহলে হয়তো বোঝা সম্ভব যে সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্সের
মৃত দেহের পেশী , রঙ কেন আজও অমলিন ! আপনাদের ভারতের পুরনো গোয়ার চার্চে তা
সংরক্ষিত আছে ।“
আমি মন দিয়ে
শুনতে থাকলাম । প্রোফেসর কাপটা পাশে রেখে আমার দিকে আরও গভীর ভাবে তাকিয়ে থাকলেন ,
যেন কিছু একটা উত্তরের আশায় অপেক্ষা করছেন । আমি চুপ করে আছি দেখে উনি আবার মুখ
খোলেন , “ ডঃ রায় , আশাকরি আপনি আমাকে হেল্প করবেন । আই এম ইউর ফ্রেন্ড । আমি
দেখাতে চাই জগতকে ভারতের ভেষজ কতটা মহান । প্রোফেসর নন্দী আমাকে বলেছিলেন তার কাজ
যদি অসমাপ্ত থাকে তাহলে আপনি তা এক সময় শেষ করে ওর স্বপ্ন পূরণ করবেন । তিনি শুরু
করেছিলেন , মৃত দেহ কোন অজৈব রসায়ান ছাড়াই অত্যন্ত ঘরোয়া উপায়ে সজীব রেখে দেবেন
দীর্ঘদিন । তার ডেথের পর আপনি এই নিয়ে একবার খবর পেয়েছিলাম অনেকটাই এগিয়েছেন ।“
দীর্ঘ বক্তব্য
রেখে বাকী পানীয়টা এক নিঃশ্বাসে শেষ করলেন , বুঝলাম এবার আমার পালা । গলা ঝেড়ে
বললাম , “ প্রোফেসর ঠিকই ধরেছেন , কেটোহেক্সাসোডিকারকামা হল প্রয়াত আঙ্কেলের সেই
স্বপ্ন ,যেটা আপনি এতক্ষণ বললেন ।“
প্রোফেসরের মুখ
ঝুলে গেল নাম শুনে । ঠোঁটটা নীচের দিকে ঝুলিয়ে বার কয়েক উচ্চারণ করার চেষ্টা করলেন
“ কেটোহেক্স...কেটো... ডঃ রায় ইজ দেয়ার এনি...।”
ওকে থামিয়ে বেশ
মজা নিয়ে বললাম , “ আপনাদের জন্য একটি আদুরে নাম রেখেছি ‘ অগ্নি স্বর্ণ ‘ ,
একপ্রকার তরল । যা মাখিয়ে রাখলে...।“
“ আমাকে দিন
প্লিস , যা টাকা বলবেন ...।“
“ সরি প্রোফেসর
প্রাইস লেস ওটা ...” মাঝ পথেই থেমে গেল কারন পরিবেশক মহিলা হাসি মুখে জানতে চাইলেন
আর কিছু লাগবে কিনা । বুঝলাম খাওয়া শেষ এবার আসতে পারেন বলার মধুর ভঙ্গিমা ।
প্রোফেসরই দাম মেটালেন সাত পাউন্ড অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় দুই কাপ চকলেট ঘাঁটা কফির
মুল্য ৬২৯ টাকার মত । আমিই এবার উল্টে হাঁ হয়ে গেলাম ।
৪
বিকাল বিকাল বাড়ী
ফিরলাম । পথে লাঞ্চ করে নিয়েছিলাম ।
এখানকার জল আর পাবলিক টয়লেট কিছুদূর অন্তর অন্তর রয়েছে । ড্রাইভ করতে গিয়ে
প্রোফেসর “ উফ , গড “ বলে গাড়ীটা সাইডে দাঁড় করেছিলেন মাঝে । আমি বসে ছিলাম গাড়ীতে । খানিক পরেই হাসি মুখে এসে স্টিয়ারিং ধরতেই একটা ছেলে
দৌড়ে এসে ,” ইউর লেন্স স্যার “ বলে ছোট্ট দুটি লেন্স দিতেই আমি ভ্রূ কুঁচকে
তাকিয়েছিলাম কয়েক পলক । “ ভালোই পাওয়ার
আছে , বালি লেগেছিল তাই চোখ ধুতে গিয়ে...” অকাট্য যুক্তি স্মিথের ।
ড্রাইভ করতে করতে একটা মমির বিষয়ে তিনি গল্প
করছিলেন । রোসালিয়া লম্বার্ডর , দ্য
স্লিপিং বিউটি । মৃত্যুর এত বছর পরেও সেই দুই বছরের মেয়েটি তাকায় আবার চোখ বোজে ।
এটা ঠিক বিজ্ঞান জানিয়েছে ওর শিওয়রের কাছে থাকা জানলা আর আলোর প্রতিফলনেই এই
হ্যালুসিনেশন । এ জগতে চোখে যা দেখা যায় তা যে সব সময় সত্য হবেই সেটা যে অর্থহীন
তারই প্রমান মমিটা । কিন্তু মাথায় আসছিল না
একথাগুলো বলতে বলতে প্রোফেসরের দুই চোখ আর কণ্ঠস্বর এত দৃঢ় আর লোভীর মত কেন শোনাচ্ছিল
! অবাক লাগছিল । নন্দী পিসো যখন
প্রোফেসরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তখন কেবলমাত্র সাধক আর গবেষক ছাড়া আর কিছুই
লাগে নি । সময় কী মানুষের বুকে লোভের তীক্ষ্ণ ফলার আঁচড় দিয়ে যায় !
“ প্রোফেসর রায়
আজ কিন্তু আপনার নতুন আবিষ্কারের ম্যাজিক দেখাতেই হবে ।“ বাড়ী ফিরে ড্রয়িংরুমে গা এলিয়ে কথাটা বললেন ।
“ এখানে ? আর
দেখতেই বা চাইছেন কেন ?” আমি বললাম ।
“ আপনার আঙ্কেল
আমার ক্লোজ পারসন ছিলেন অ্যান্ড ইউ টু । তাছাড়া মিউজিয়ামের লাইব্রেরীতে ওই সাত
বছরের মেয়েটির মমির বিষয়ে হিরিয়গ্লিফিক লেখা “ মদজু নেতজের “ অর্থাৎ ‘ ভগবানের শব্দ
‘ কয়েক মাস আগেই পড়েছিলাম তখন একটা অদ্ভুত লেখা পড়ে চমকে গেছিলাম !”
“ কী ছিল লেখা
প্রোফেসর ?” আমিও কৌতূহলী হলাম ।
“ সালফো তাত তিফি
কি বাদ্রেন ।“
“ মানে ?”
“ সে প্রতি
পূর্ণিমায় জেগে উঠবে কিন্তু তারপরেও কিছু একটা লেখা ছিল যা নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্য
উদ্ধার করতে পারি নি আর আজই সেই পূর্ণিমা ।“ শেষে সেই অদ্ভুত ঝিম ধরানো গলা । যেন
মাদকতার মধ্যে লোভ ।
অলিভিয়ার কাজ
এখনও শেষ হয় নি । আমাদের চা দিতে এসেই প্রোফেসর স্মিথ দাঁত খিঁচিয়ে চেয়ার ছেড়ে লাফ
দিয়ে উঠলেন , “ কতবার বলতে হবে আমাদের
কথার মাঝে বারবার আসবে না , গেট আউট ।“ অলিভিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আমার চোখের দিকে
করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ ,যেন ওর কালো মণির মধ্য দিয়ে কিছু বলতে
চাইছেন আমাকে । শেষে “ আউট “ শব্দে চমকে উঠে ধীরে ধীরে চলে গেলেন কাপ দুটো নামিয়ে
।
প্রোফেসরের গলার
স্বর পেয়ে মিসেস স্মিথ প্রায় দৌড়ে আসলেন । আমার দিকে ফিরে চোস্ত ব্রিটিশ ইংরাজিতেই
বললেন , “ ডোন্ট মাইন্ড , দিস ব্লাডি স্লেভস কান্ট আন্ডারস্ট্যান্ড দ্য সিচুয়েসনস্,
হোপ ইউ...” অনুরাধা বৌদির গলায় কেন জানি না খুব বেমানান লাগলো উচ্চারণগুলো ।
রাত দশটা নাগাদ
প্রোফেসর স্মিথ আর আমি আবার রওনা হলাম মিউজিয়ামে । ওনার নাকী স্পেশাল পারমিশন আছে
। যাইহোক সুবিশাল প্রাসাদের ৬২ নম্বর রুমের জায়াসেতিমুর মমির কাছে আমরা দুজন ।
প্রোফেসর স্মিথ কাঁচের ঢাকনা সরিয়ে আমাকে চোখের ইঙ্গিত করলেন । ঘরের কোণায় হাল্কা
আলো । ওরই মধ্যে ঘড়ির কাঁটা বলছে ১২টা বাজতে মিনিট তিনেক বাকী , আরেকটু পরেই ভরা
পূর্ণিমার চাঁদ মাঝ আকাশে উঠবে । কেন জানি না আমার সারা শরীর অবশ হয়ে যেতে লাগলো ,
অদ্ভুত একটা শিরশিরানি ।
কাছের গির্জায় ঢং
ঢং করে বারোটা ঘণ্টা পরতেই ঘড়ঘড়ে গলার শব্দে চমক ভাঙল । প্রোফেসর স্মিথ জাদুকরের
মত দুহাতের আঙুল ঘোরাতে ঘোরাতে প্রথমে বিড়বিড় পরে জোড়ালো গলায় বলছে ,” নাহদু মিন
অ্যালনুন... নাহদু মিন অ্যালনুন জায়াসেতিমু... নাহদু... জেগে ওঠো ঘুম থেকে...”; ওর
চোখের দিকে দেখলাম কালচে মণি দুটো জ্বলছে । আমার দিকে ধীরে ধীরে হাতের ইশারায় কী
যেন বললেন । বুঝলাম না , অনুমান করলাম আমার হাতে ধরা সোনালী শিশিতে রাখা তরল
কেটোহেক্সাসোডিকারকামা অর্থাৎ অগ্নি স্বর্ণ ঔষধি ঢেলে দিতে বলছেন ।
নিজের মধ্যে ফিরে
এসে ওর আদেশ মত কয়েক ফোঁটা ঢালতেই ঝুঁকে পরলো প্রোফেসর । দেখাদেখি আমিও । হাত
ঘড়িতে টিকটিক শব্দ । ক্রমশ সুপ্রাচীন মমির শুকনো গালে ফ্যাকাসে থেকে গোলাপি আভা ,
হাড়ে একটু যেন মাংসের আভাস । খানিক পরে দেখতে দেখতে বাসি চুলে লালচে সোনালী রঙ ।
প্রোফেসরের গলা
থেকে ছিটকে এলো “ জ্যামিনোন জ্যামিলেন , চমৎকার , সুন্দর ।“
রাত কটা হবে জানি
না সব কান্ড শেষ হতে অনেকটাই রাত বা ভোর হয়ে গেল । কারণ বাইরে প্রথম ট্রামের শব্দ
। প্রোফেসর নিজের মধ্যে ফিরে আমার হাত ধরে খানিকটা হিড়হিড় করে টানতে টানতে বাইরে
বেড়িয়ে গাড়ীতে বসলেন ।
৫
দুপুর হয়ে গেল
ঘুম ভাঙতে । আজ খাঁটি ব্রিটিশ খাওয়ার । পেট পুরে খেয়ে ফেললাম , খিদেটা কেন জানি না
চাগাড় দিয়ে উঠেছে । অনুরাধা স্মিথ জানালেন অলিভিয়া ওর ছেলে কেনেথকে নিয়ে বাইরে
যাবে বলে আজ থাকবে না । প্রোফেসর পুরনো গলায় হাসতে হাসতে বললেন , “ বাঁচা গেল । আজ
কিছু জিনিষ বিকালে ঠিক করে নেব কেমন প্রোফেসর রায় ।“
দুপুরে ঘন্টা
দুয়েক শুয়ে নিলাম । সব গণ্ডগোল লাগছে ,
বাড়ীর কথা , মায়ের মুখ মনে পরে যাচ্ছে । হাজার হোক ভেতো বাঙালী । সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ
আমার রুমের ইন্টারকমে প্রোফেসর জানালেন তার স্টাডিরুমে চলে আসতে , সাথে অগ্নি
স্বর্ণ যেন নিয়ে আসি ।
সামনে বড় একটা
রিডিং ল্যাম্পের ওপাশে রিভলবিং চেয়ারে বসে আছেন প্রোফেসর স্মিথ আর ঠিক ওনার পিছনে
গাউন পরে অনুরাধা স্মিথ । আমি ঘরে ঢুকতেই প্রোফেসর “ ওয়েলকাম মাই হিরো , তোমার
কথাই ওকে বলছিলাম “ বলেই নিজের স্ত্রীর দিকে তাকালেন । আমি হেসে ফেললাম ।
“ বলুন স্যার কী
প্রয়োজনে ডাকলেন ?”
“ ও ইয়েস রাইট ।
শোনো তোমার ওই স্বর্ণ অগ্নি আমাকে দাও , আই উইল পে ইউ লামসাম মানি ...” কথার মাঝেই
মিসেস মুখার্জী ওরফে অনুরাধা স্মিথ বললেন , “ রোহিতাশ্ব প্লিস আমাকে দেখাও
একটিবার । পরে তোমাদের কথা হবে ।“
প্রোফেসরের
প্রস্তাবটা শুনেই মেজাজটা খাপ্পা হয়ে উঠেছিল । আমার মুখটা দেখে বুদ্ধিমতী স্মিথ যে
আমাকে সামলিয়ে নিলেন সেটা বুঝতে পারলাম । আমি ওর দিকে তাকাতেই দেখি উনি একটা
কাঁচের বয়াম নিয়ে আমার পাশে এসে হাজির । ওটাতে একটা কঙ্কাল , সাপের কঙ্কাল ।
আমি একবার ওইদিকে
তাকিয়ে প্রোফেসরের চোখে চোখ রেখে বললাম , “ আপনি কী লেন্সের কালার চেঞ্জ করেন নাকী
বারবার ?”
থতমত খেয়ে
প্রোফেসর খানিকটা আমতা আমতা করে বললেন , “ বড্ড ভুলো মন , কেন আগে কী দেখেছ ?”
“ নীল থেকে কালো
, কালো থেকে নীল ।“
হা হা করে হেসে
উঠলেন প্রোফেসর , ভাবটা এমন যেন এমন কোন ব্যাপারই না , “ আসলে আমার চোখের রঙ নীল
বাট আই লাভ অনুরাধা দ্য ব্ল্যাক আই ।“
আমিও মুচকে হেসে
বললাম , “ নো ওনার ঘোলাটে ব্রাউন ...যাক গে ম্যাডাম একেও মমির মত দেখতে চাইছেন তো !”
মাথা নাড়ালেন দম্পতি । কয়েক ফোঁটা দিতেই কঙ্কালের দেহে মাংস , চমক লাগলো নতুন গজিয়ে
ওঠা চামড়ায় ধীরে ধীরে । ঘরে পিন পরলেও
যেন শব্দ হবে ।
টেবিলের উপর রাখা
থাকলো বয়ামটি । আমি বললাম , “ এর এফেক্ট ওই
২৫০ঘন্টা মত থাকবে ম্যাডাম ।“
অনুরাধা স্মিথ “
ওয়ান্ডারফুল “ বলে খানিক চুপ করে থাকলেন । প্রোফেসর উঠে দাঁড়িয়ে এক ঢোক হার্ড ড্রিংক খেয়ে আমার দিকে সরাসরি তাকিয়ে বললেন “
আই নিড দিস প্যেটেন্ট ডঃ , যে করেই হোক ।“ শেষের দিকে গলায় খানিকটা আদেশের সুর ।
আদেশ বরাবর অপছন্দ করি আমি । ওর কথায় আমি উঠে দাঁড়ালাম ।
“ সিট সিট আই সে
সিট ডাউন । সি ডঃ তোমার ওই ইন্ডিয়ায় আছেটা কী অ্যাঁ , বেগার কান্ট্রি । ওখানে
এইসবের দাম পাবে না । বাট আই উইল গিভ ইউ ...।“
“ ইনাফ ডঃ স্মিথ
আমি বিক্রি করবো না ” বলেই টেবিল চাপড়ে বললাম ।
অনুরাধা স্মিথ
স্বামীকে শান্ত করতে যেতেই ঘটলো বিপত্তি । টেবিলের উপর কাঁচের শিশিতে রাখা স্বর্ণ অগ্নি নীচে পরে ঝনাৎ করে ভেঙে গেল
। প্রোফেসর আর্তনাদ করে রাগের বসে মিসেস স্মিথের গালে সজোরে এক থাপ্পড় মারতেই
মিসেসে স্মিথ ঘুরেই গাউনের তলা থেকে পিস্তল বার করে সোজা প্রোফেসর স্মিথের দিকে
তাক করে বললেন , “ জ্যাক এক পা নড়েছো কী খুলি উড়িয়ে দেব ।“
একী দেখছি আর
শুনছিই বা কী ! জ্যাক ! আলেকজান্ডার স্মিথ কী করে জ্যাক ! বন্দুক তাক করেই আমার
দিকে আড়চোখে তাকিয়ে অনুরাধা স্মিথ বললেন
,” ওয়েল ওই প্যাটেন্ট আমি কিনবো নইলে মাই ডিয়ার রায় তোমার হালও জ্যাকের মত করে ছাড়বো ।“
“ ম্যাডাম কিছুই
বুঝলাম না আমি , হি ইজ ইয়র হাসবেন্ড ।“
“ হু ? হি ? নো
ওয়ে । সি প্রোফেসর তুমি ভালো মানুষ । জ্যাক হলেন আসল আলেকজান্ডার স্মিথের সৎ ভাই ।
আলেকজান্ডার অ্যাংলো ইন্ডিয়ান । ওর মা ভারতে মারা যান আর তারপর ওর বাবা ইংল্যান্ডে
চলে আসেন । এখানেই দ্বিতীয়
বিয়ে করে , তারই সন্তান জ্যাক । ইয়েস ইউ আর রাইট ,ওর মণি নীল । আর আমার পরিচয় উনিই
না হোক দিক ।“
কথার ফাঁকে নাম না জানা ভদ্রমহিলা খানিকটা অসাবধান হতেই
জ্যাক বন্দুক ধরা ডান হাত ধরতে যেতেই ঘর কাঁপিয়ে একটি বুলেট গিয়ে লাগলো জ্যাকের
বাঁ পায়ে । “ ও গড” বলে নীচে পরে কাৎরাতে থাকে জ্যাক । পা থেকে গলগল করে রক্ত বেরোতে
থাকে ।
আমি ওর দিকে
এগোতেই “ নো নো ওকে পরে থাকতে দাও আর তুমি আমাকে যা চাইলাম তার ফুরমুলা দিয়ে কেটে
পরো এদেশ থেকে ।“ আমার কপালে ঠাণ্ডা বন্দুকের নল । পাশের দেওয়ালে আমার পিঠ ঠেকেছে
। ওর গরম নিঃশ্বাস আমার মুখের উপর ঘনঘন পড়ছে ।
“ হল্ট ইউ বি...”
খেয়াল করি নি অলিভিয়া কখন পুলিশ নিয়ে হাজির । ধরা পরলো মহিলাটা । চোখে যেন আগুন !
আমি দ্রুত পাশের
রুম থেকে সর্বক্ষনের সঙ্গী ট্যানিফ্লোরাম রোডিওলার কয়েক ড্রপ ওর জিভের তলায় ঢেলে
দিলাম । অলিভিয়া ক্ষত মুছিয়ে প্রোফেসর স্মিথ ওরফে জ্যাককে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন
।
সেইরাত কোন মতে
পার হয়ে পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্ট দিতে অলিভিয়া মুখ খোলেন “ আপনি খেয়ে নিন সব
বলছি “ মুখে হাল্কা হাসি, যেন সব ভার নেমে গেছে । আমি হতভম্ব বাংলা শুনে ।
চা খেতে খেতে
অলিভিয়া বাংলাতেই বললেন , “ আমিই আসলে অনুরাধা । প্রোফেসরকে জ্যাক আর ওই মেয়েটা
অর্থাৎ আসল অলিভিয়া তোমার আসার কথা শুনে বিষ প্রয়োগ করে মারার চেষ্টা করে । আমিই
ওদের কাছে প্রোফেসরের প্রান বাঁচানোর জন্য হাতেপায়ে ধরতে ওরা আমাকে অলিভিয়া সেজে
থাকতে বলে । কারণ বাংলার খাবার , পরিবেশ অলিভিয়া কিছুই জানে না ।“
“ ও আসলে কে ?”
“ ও আসলে
স্মাগ্লিং এ জড়িত কিন্তু প্রমানের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায় । ওরা তোমার প্যাটেন্ট নিয়ে
লোককে ভাঁওতা দিয়ে টাকা রোজগার করতো এটাই ছিল পরিকল্পনা । কিন্তু লোভের পরিনতি
নিয়তি ঠিকই করে রাখে । আমি আন্দাজ করেছিলাম কাল রাতে অমন কিছু ঘটবে তাই ছেলেকে
নিয়ে বাইরে যাওয়ার সুযোগে পুলিশে জানাই সব ।“
“ আর প্রোফেসর !”
একটা
দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন , “ উনি আরও অসুস্থ হয়ে পরেছেন ।“
ওইদিনই সকালে
মিসেস অনুরাধাকে নিয়ে হাজির হলাম হসপিটালে । ডাক্তারের উপস্থিতিতেই ট্যানিফ্লোরাম
রোডিওলা খাওয়ালাম । মিনিট পনেরোর পর আলেকজান্ডার স্মিথ চোখ খোলেন । কালো মণি দিয়ে
আমাকে দেখতে লাগলেন । ধীরে ধীরে আমার হাতের উপর হাত রেখে বললেন “ তুমিও তোমার
আঙ্কেলের মত মেধাবী , উদার । ট্যানিফ্লোরাম রোডিওলার মত কেটোহেক্সাসোডিকারকামা –
স্বর্ণ অগ্নি মানব কল্যানে , মর্ডান মেডিক্যাল সায়েন্সের কাজে লাগিও ।“ খানিক থেমে
আমতা আমতা করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন ।
“ জানতে চাইছেন
তো ওটা কী ?” ভদ্রলোক হাসলেন আমার কথায় ।
“ মধু হলুদ আর
নুন আছে এইটুকুই বলতে পারি স্যার ...ভারতের মহান ভেষজ “।।
No comments:
Post a Comment