১
সাতটি চম্পা ফুল শেষ অবধি সাত রাজপুত্র আর পারুল তাদের একমাত্র বোন । আবার সবাইকে পেয়ে রাজার আনন্দ দেখে কে ! ছোটরাণীর দুঃখের দিন শেষ । ছোটরাণীকে তার ছোট্ট কুঁড়ে ঘড় থেকে মহা সমারোহে বৃদ্ধ রাজা নিয়ে এলেন তার সুবিশাল রাজপ্রাসাদে । সারা রাজ্যে খুশীর আবহাওয়া । সেই হিংসুটে বড় রাণীরাও উচিৎ শাস্তি পেয়েছে ।
দিন সুন্দর ভাবে কেটে যাচ্ছে । সাত ফুটফুটে রাজকুমার সুন্দর ভাবে সেজে রাজার সাথেই রাজসভায় যান । মন্ত্রী থেকে আমলা সকলেই তাদের সম্মান করে । আর পারুল রাজকন্যা তার মায়ের সাথে হাত মেলান নানা ঘড়ের কাজে । রাজার সকল চিন্তা দূর হয়ে গেছে ।
এমন সময়ে একদিন এক প্রজা এসে কাতর স্বরে জানায় , “ মহারাজ আমার সামান্য খেতের ফসল সোনার ধানে ভরে ছিল কিন্তু আজ ভোর বেলায় দেখলাম সমস্ত শস্য উধাও , এক দানাও পরে নেই !”
এ কথা শুনেই সকলেই অবাক হয়ে যায় । রাজার সাথে সাত ভাইয়ের মনও চঞ্চল হয়ে ওঠে । রাজা ভাবেন, তার রাজত্বে তো এমন ঘটনা ইতিপূর্বে হয় নি ।
যাইহোক , রাজা তার প্রধান খাজাঞ্চীকে বলে দিলেন এই গরীব চাষিকে যেন এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা দিয়ে দেওয়া হয় ।
রাজ নির্দেশে গরীব চাষি খুশী মনে রাজ সভা থেকে বিদায় নেয় । রাজা তার পুত্রদের সাথে সেদিনকার মত সকল কাজ শেষ করে ফিরে গেলেন রাজভবনে । রানীমা পরিপাটী করে আজ নিজের হাতে রান্না করেছেন । দাস দাসীদের সাহায্যে পারুল বোন দাদাদের , বাবার পাতে তুলে দিচ্ছেন নানা সুস্বাদু ব্যঞ্জন ।
রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লেন নিশ্চিন্তে । এমন সময় সারা প্রাসাদ জুড়ে শুরু হল ভয়ংকর সব শব্দ । সাত ভাই খাপ থেকে তলোয়ার বার করে ছটাছুটি করলেন । এখন তারা যথেষ্ট স্বাবলম্বী , বৃদ্ধ রাজার প্রধান সাত সৈনিক যেন ।
রাজা মশাই বাইরে বেড়িয়ে দেখলেন, প্রাসাদ জুড়ে রাক্ষসের দল শুরু করেছে উৎপাত । কিছু রাক্ষস আস্তাবলের অশ্বদের ধরে ধরে খাচ্ছে , কেওবা রাজ উদ্যানের সব ফল ফুল ছিঁড়ে তছনছ করে দিচ্ছে । আর সাত ভাই বীরবিক্রমে লড়াই করে যাচ্ছেন । তলোয়ারের ঘায়ে ফিনকী দিয়ে ছুটছে রাক্ষসদের কালো রক্তের ধারা ।
সারা রাত ধরে লড়াই চলতে চলতে রাজপুত্ররা, রাক্ষসরাও ক্লান্ত । এদিকে ভোর হয়ে আসছে । আর সূর্য উঠলেই রাক্ষসদের সমস্ত শক্তি চলে যায় । তাই সে রাতের মত রাক্ষসদল শেষ আক্রমণ চালাল ।
রাক্ষসদের মধ্যে যে প্রধান সে রাজাকে বলে উঠল,
“ হাঁউ মাঁউ খাঁউ
রাজা শর্ত দিলাম যাও –
পারুলকে ফিরে আবার পাবে
একটি করে মানুষ দিতে হবে ।”
বলেই রাক্ষসরা সদলবলে ডানা মেলে সোঁ সোঁ করে ভোরের আলো ঠিক ফুটবার আগেই আকাশে উড়ে চলে গেল ।
রানীমা আর রাজার তো মাথায় হাত । এমন হবে কোন দিনই ভাবেন নি । সাত ভাই রক্ত মুছে বাবা মায়ের কাছে ফিরলেন । তখন বৃদ্ধ রাজা আর রাণী ওদের দেখেই ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে খুব করে কাঁদতে লাগলেন । তাদের একটিমাত্র কন্যা পারুলকে রাক্ষসরা ধরে নিয়ে গেছে । এ দুঃখ কি ভাবে সামলান !
পরের দিন রাজামশাই এই ভয়ানক অথচ খারাপ খবরটি রাজসভার সবাইকে দিলেন । তিনি মাথা নীচু করে বসে ছিলেন বেশ কিছুক্ষণ । অবশেষে প্রধান মন্ত্রী সভার দিকে তাকিয়ে বললেন, “ রাক্ষসরা বলে গেছে প্রতি রাতে তাদের জ্যান্ত একটি করে মানুষ দিতে হবে , নাহলে তারা রাজকন্যা পারুলকে আর কোনদিনই ছাড়বে না ।”
এমন ভয়ানক খবরে সকলেই অস্থির হয়ে পড়লেন । তাদের রাজ্যে রাক্ষসদের উৎপাত আগে কোন দিনই হয় নি ।
সাত ভাই চম্পা তারা কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছিলেন না যে তাদের বোনের জন্য নিরীহ প্রজাদের মরতে হবে ! তাই তারা বাবাকে বললেন একসাথে , “ পিতা যাই হোক , আমাদের পারুলের জন্য কোন নিরীহ প্রজাকে আমরা কিছুতেই রাক্ষসদের হাতে তুলে দেব না ।”
একথা শুনে পুত্রদের প্রতি গর্ববোধ যেমন হল ঠিক তেমনি পারুল মা’র জন্য মনটাও উঠল কেঁদে । ছোটরাণীরও এক মত । রাজামশাই তখন বুক বেঁধে ঘোষকদের খবর দিতে বলে দিলেন রাজ্যের সকল প্রজাদের কাছে ।
ঘোষকের দল সারা রাজ্যে বিশাল বিশাল ঢ্যাঁড়া পিঠিয়ে ঘোষণা করে দিল –
“ রাজ্যবাসী প্রজাগণ শোন দিয়া মন –
রাজার আদেশ, কারো হবে না দিতে জীবন,
সাত কুমার লড়বে দুষ্ট রাক্ষসদের সনে-
দিও আশিস, থাকহ নিশ্চিন্ত মনে...।”
এই রাজ আদেশ শুনে প্রজারা রাজা ও সাতপুত্রকে ধন্য ধন্য বলে উঠল । আর দিয়ে গেল তাদের প্রান ভরা আশীর্বাদ ।
২
রানীমা সহ সকলের গর্বের সাথে মনটাও হু হু করে উঠছে । যদি রাক্ষসদের কানে একথা যায় তবে কী তারা পারুলকে ছেড়ে দেবে ! মায়ের মনের এই কথা বুঝতে পেরে বড় কুমার স্বান্তনা দিয়ে বললেন , “ মা আমরা সাত ভাই আমাদের পারুল বোনকে ঠিক ফিরিয়ে আনব, চিন্তা করো না বৃথা ।”
রাজা রানী সকলেই জানেন তাদের পারুল খুবই সাহসী আর বুদ্ধিমতি ।
রাক্ষসদের কানে রাজ নির্দেশ যেতে বেশী দেরী করে নি । তাদের লম্বা লম্বা কান অনেক দূরের কথা সহজেই শুনতে পায় । রাত হতে বেশী বাকী নেই । এখন তারা সব সাধারণ মানুষদের মত রূপ নিয়ে আছে গুহার মধ্যে ।
পারুলকে তারা একটা আগুনের খাঁচার মধ্যে আটকে রেখেছে । একটা মুলোর মত দাঁত উঁচু রাক্ষস নিজের বিশাল রূপ ধারণ করে রাজকন্যা পারুলকে বলল –
“ সাত ভাই চম্পার এক মাত্র বোন
রাজা করেছে যে ভুল-
দিতে হবে খুব মাশুল ,
আজ রাতেই খাব প্রাসাদ,বাঁচবে না একজন ।”
রাজকন্যা পারুলও সাহস দেখিয়ে বলেন ,
“ সাত ভাই চম্পা পারুল ফুল –
আমাকে ধরে করেছ মস্ত ভুল ।”
পারুল রাজকন্যার কথা শুনে রাক্ষসরা হেঁসে কুটিপাটি । রাতের আঁধার অনেক আগেই নেমে গেছে । ধীরে ধীরে মানুষের রূপ ছেড়ে কুৎসিত সব চেহারায় পরিণত হয় শয়ে শয়ে রাক্ষসদের দল । আগুনের খাঁচা ভাল করে পরীক্ষা করে তারা হুস করে একসাথে হাওয়ার মধ্যে মিলিয়ে গেল । রাজকুমারী পারুল ভালো করে এবার চারিপাশটা খাঁচার ভিতর থেকেই দেখলেন । সারা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মাথার খুলি , হাড়গোড় ।
এমন সময় তার নজরে আসে একটা পক্ষীরাজ ঘোড়া । মনে মনে ভাবলেন , এ আবার কোন রাক্ষস নয়তো ! তাও পারুল গলা উঁচু করে পক্ষীরাজের দিকে তাকিয়ে বলেন ,
“ যক্ষ পিশাচ মানব পশু করো না খল –
পারুল আমি,রাজার কন্যা,
পক্ষীরাজ অশ্ব সেজে করছ কেন ছল !”
অদ্ভুত ভাবে মাথা ঝাঁকিয়ে পক্ষীরাজ চোখের জল ফেলতে ফেলতে বলে ,
“ জানি আমি তুমি রাজার কন্যে
রাক্ষস নিয়ে এসেছে এ অরন্যে ।”
কথা শুনে পারুল বুঝলেন তার মত একেও খাওয়ার জন্য রাক্ষসরা নিয়ে এসেছে । মায়া হল তার মনে । ভালো করে নজর দিতেই দেখলেন , পক্ষীরাজের একটি ডানা রাক্ষসরা কেটে ফেলেছে আর সেখান থেকে বয়ে যাচ্ছে রক্ত ।
আবার রাজকন্যা পক্ষীরাজকে জিজ্ঞাসা করলো ,
“ আমি বাঁচলে তোমারও মুক্তি-
দিলাম তোমায় প্রতিশ্রুতি ;
রাক্ষসকুল কেমনে হবে ধ্বংস
উত্তর কী আছে, করলাম যা প্রশ্ন ?”
পক্ষীরাজ একটি ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে মাথা নাড়িয়ে কিছু বলতেই রাজকন্যা পারুলের মুখে ফুটে উঠল হাসি ।
৩
সে রাতে আরও বীভৎস চেহারা নিয়ে রাজপ্রাসাদ প্রায় ধ্বংস করার সমস্ত চেষ্টা চালাল রাক্ষসের দল । রাজা, রানী আর সাত ভাইকে নানা রূপ ধারণ করে ভয় দেখাতে লাগল । রাক্ষসদের গন্ধে সারা রাজ্যের বাতাস ভারী হয়ে উঠল । মায়া বিদ্যায় আচমকা নীল বিষের বৃষ্টি শুরু করে দিল তারা । গরীব প্রজাদের গায়ে সেই জল পড়তেই তারা যন্ত্রণায় চীৎকার করতে করতে পাথরে পরিণত হয়ে যায় । এ সব দেখে রাজা হায় হায় করতে থাকেন ।
রাজপুত্ররা সারারাত ধরে চালিয়ে গেলেন অসীম যুদ্ধ । কিন্তু শেষ রক্ষা হল না ! যুদ্ধ , ধ্বংস শেষ করে রাশি রাশি রাক্ষসরা যখন সূর্যের আলো ফুটতেই পালাল ঠিক তখনই মন্ত্রী এসে দিলেন এক দুঃসংবাদ !
ছোট রানী সে কথা শুনেই বিলাপ করতে লাগলেন । বললেন , “ আমার জন্যই এমন হচ্ছে , আমি না আসলে এমন হত না !”
রাজা গম্ভীর ভাবে বললেন , “ এমন কথা কয় না রাণী ! তুমি না আসলে আমি তোমাকে আর আমার সন্তানদের ফিরেই পেতাম না ।”
মন্ত্রী ব্যাস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন , “ মহারাজ এখন কী উপায় হবে বলুন ! সাত রাজকুমারকেও রাক্ষসরা ধরে নিয়ে গেছে প্রতিশোধ নিতে ?”
মন্ত্রীকে রাজা হাত নেড়ে বিদায় জানালেন । মন আজ খুবই বিষণ্ণ । রানীকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন তার ইষ্ট দেব মন্দিরে । হাতজোড় করে জানালেন তারা প্রার্থনা ।
তারপর রাজা মন্ত্রী আমাত্যদের দিয়ে বেরলেন প্রাসাদের বাইরে । তার সোনার রাজ্য যেন শ্মশানে পরিণত হয়ে গেছে । স্বর্ণ ধান ক্ষেত্র পুড়ে ছারখার । সকল প্রজা ধূসর বর্ণের পাথরে দাঁড়িয়ে আছে ; যেন নির্বাক হয়ে রাজার কাছে অনুনয় করছে তাদের বাঁচাবার জন্যে ।
ফিরে এলেন বৃদ্ধ রাজা তার প্রাসাদে । শূন্য এই বিশাল ভবনে তার থাকার আর মন নেই । উপায়ও খুঁজে পাচ্ছেন না কী করে এদের সকলকে বাঁচাবেন ! এমন সময় রাজার পোষা ময়না ডেকে ওঠে –
“ রাজা মশাই রানীমা কর না দুঃখ
সাতভাই পারুল বোনের ভাঙবে না সখ্য ;
সোনার জলে উঠবে বেঁচে রাজ্য
ইষ্টদেব সহায় আছেন , মনে রাখ ধৈর্য ।”
চোখের জল মুছে রানীমা আর মহারাজ ময়নার কাছে গিয়ে পিঠে গলায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন । একটাই কথা ভাবলেন তারা , ‘ ঠিক হয়ে সব , সাত ভাই চম্পা পারুল যেন থাকে মঙ্গলে !’
৪
নিকশ অন্ধকারে গুহার মধ্যে রাক্ষসরা আজ কোথাও যাবে না বলে ঠিক করেছে । নরমুণ্ডের উপর জ্বালিয়েছে মশাল । তার শিখার আলোয় একটা নির্দিষ্ট কক্ষ আলোকিত । সাত ভাইকে রাক্ষসরা বন্ধী করে রেখেছে আলাদা আলাদা খাঁচায় । আজ এদের একটা একটা করে কড়মড় করে খাবে ।
বড়কুমার ,মেজকুমার, সেজকুমার, ফুলকুমার, সোনাকুমার আর ন’কুমারকে একটা বিশাল মাটির খাঁচার মধ্যে আটকে রেখেছে । ছোটকুমার তাদের বেশী ক্ষতি করেছে আর তার তেজও সাংঘাতিক, তাই তাকে পুড়েছে জলের খাঁচার মধ্যে ।
রাক্ষস সর্দার ছুঁচলো লম্বা দাঁত বার করে সবার দিকে তাকিয়ে হাসছে । মুখ দিয়ে বেরোচ্ছে দুর্গন্ধ , মুখে লালার ফোয়ারা । মাঝে মধ্যে জট পাকানো নখ দিয়ে খুঁচিয়ে দিয়ে বলে উঠছে ,
“ সাত ভাই চম্পা জাগ রে
এবার আমরা কড়মড়িয়ে খাব’রে !”
আর সব রাক্ষসরা সর্দারের এই কথা শুনে কী হাসি হাঁসতে লাগল ! তারা আনন্দে আত্মহা্রা হয়ে কিছুক্ষণের জন্য ভুলেই গেল সাত ভাই চম্পাদের কথা ।
ঠিক এমন সময় আগুন খাঁচায় বন্ধী পারুল সজোরে ডেকে ওঠে ,
“ সাতভাই চম্পা পারুল বোন আছে এখনো
রাক্ষস বংশ নিপাট হবে, তোমরা শোনো ।
পক্ষীরাজ পক্ষীরাজ নাড়াও তোমার ডানা –
ছোট দাদা জেগে ওঠ , ভাঙবে খাঁচা খানা ।”
যেই না বলা অমনি পক্ষীরাজ তার একটা ডানা দিয়ে বহুকষ্টে জলের খাঁচায় বন্ধী রাজকুমারের দিকে এগিয়ে গেল । ছোটকুমার থেকে শুরু করে সব ভাই জেগে উঠেছেন পারুল বোনের ডাকে পুনরায় । এ ডাক তাদের বহুপূর্বের চেনা আহ্বান ।
পক্ষীরাজ বিশাল ডানা মেলে জোরে হাওয়া দিতে দিতে যেই না জলের খাঁচায় মধ্যে ডানা ঢুকিয়েছে ! বড় রাজকুমাররা দেখতে পেলেন , ছোটকুমারের খাঁচায় একটা ছোট্ট আড়াল হয়েছে । আর সেই ফাঁকেই ছোটকুমার খাঁচার থেকে বেড়িয়ে পরেছেন । কিন্তু হায় ! এ জল সামান্য জল না ! ডানায় লাগতেই পক্ষীরাজের শেষ ডানাটিও ধীরে ধীরে গলে পরছে । তাও পক্ষীরাজ চেষ্টা চালিয়ে যায় ।
এদিকে আওয়াজ শুনে রাক্ষসরাও হুড়মুড়িয়ে চলে এসেছে কক্ষে । কিন্তু এলে হবে কী ! জল খাঁচা ডানার স্পর্শে ভেঙে গেছে । শুধু তাই নয় ! জলের তোরে নিভে গেছে আগুন ও মাটির খাঁচাও !
সর্বনাশ ! রাক্ষসরা জানতো , একটি খাঁচা যদি ভেঙে যায় তাহলে সব খাঁচা নষ্ট হয়ে যাবে । আর এ খাঁচা শুধুই রাক্ষসদের হাতেই খোলে । কিন্তু অন্য কেও ছুঁলে সঙ্গে সঙ্গে সব মায়াজাল নষ্ট হয়ে যাবে ।
রাক্ষস সর্দার মুহূর্তের মধ্যে পক্ষীরাজের গলাটা দু’হাত দিয়ে ছিঁড়ে ফেলল । আর , সাত ভাই চম্পা এবং পারুল বোনকে যেই হাত দিয়ে ধরতে গেল অমনি রাক্ষসরা দেখল , আগের মতই এক ঘটনা ; সেই যখন রাজকুমাররা ছোট ছিলেন । এখনও ঠিক তেমন ভাবে তরতরিয়ে সাতভাই আর পারুল আকাশের দিকে উঁচুতে উঠতে লাগলো ।
রাগে অন্ধ হয়ে রাক্ষস সর্দার নিজের দেহের আকারও বাড়াতে থাকে । কিন্তু রাজকুমাররা আর পারুল ফুল হয়ে আরও উঁচুতে উঠে যায় ।
দেখতে দেখতে ভোরের আলো ফুটে উঠেছে । সাত ভাই চম্পা আর পারুল ফুল হয়ে সুন্দর পাপড়ি মেলে ধরেছে । নির্মল সুগন্ধে চারিদিক মাতোয়ারা । কিন্তু রাক্ষসদের সুগন্ধ সহ্য হবে কেন ! তারা তো ভালো জিনিষ সইতে পারে না !
রাক্ষস সর্দারের দেহেই ছিল সব রাক্ষসদের প্রান পাখি । যেই না মিষ্টি গন্ধ নাকে গেছে অমনি “ বাবা গো , গেলুম গো ” বলে চিৎপাত হয়ে পরে গেল সর্দার । আর বাকী রাক্ষসদেরও একই দশা । সব রাক্ষস মুহূর্তের মধ্যে শেষ ।
রাক্ষসরা শেষ হয়ে যেতেই সাত রাজকুমার আর পারুল আবার মানুষের মত হয়ে নীচে নেমে আসেন । পক্ষীরাজ অশ্ব অনেক দিন ধরেই এখানে বন্ধী , তাই সে সব জানতো । সেই তো পারুলকে সব বলে দিয়েছিল । পারুল রাজকন্যা নীচে নেমেই ভাঙা জলখাঁচার জলের দিকে তাকেলেন । সোনার সূর্যের আলোয় তা আরও ঝলমল করে উঠছে । সেই জল পক্ষীরাজের গায়ে যেই না ছিটিয়েছেন , তখনই সাত ভাই আর বোনকে অবাক করে দিয়ে পক্ষীরাজ এক সুবেস রাজকুমারে পরিণত হয়ে যায় ।
সবাই মিলে তখন রওনা দেন তাদের রাজ্যে । পথে যেতে যেতে শুনছিলেন , প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য রাক্ষসরা নির্মল রাজকুমারকে ডানা কাটা পক্ষীরাজে পরিণত করে দেয় ।
প্রাসাদে আসতেই সাত ভাই চম্পা মা মা , বাবা বাবা বলে ডেকে ওঠেন । রাজা রানী , মন্ত্রীরা দৌরে এসে পুত্র কন্যাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন । সব কথা শোনার পর , রাজা নিজের হাতে সেই সোনার জল পাথরে পরিণত গাছপালা, প্রজাদের উপর ছিটিয়ে দেন । একটু পরেই মন্ত্র আর ওই জলের গুণে আবার সকলে আগের মত সজীব হয়ে ওঠে । সকল প্রজারা খুশী হল এদের কীর্তি শুনে ।
এদিকে , রাজার খুব পছন্দ হয়েছে নির্মল রাজপুত্রকে । তিনি ও রানী ঠিক করলেন পারুল রাজকন্যার সাথে এই সাহসী রাজকুমারের বিবাহ দেবেন ।
নির্দিষ্ট দিনে সকলের আশীর্বাদে বিবাহ হল তাদের । বৃদ্ধ রাজা বড়কুমারকে রাজভার দিয়ে রানীকে নিয়ে দেশ বিদেশ বেড়াতে গেলেন ।।
No comments:
Post a Comment