Thursday 8 February 2018

নতুন পালক - ১০ টি কবিতা

Image result for image of feather pen
গল্প ( ১৮-০১-১৮ © পবিত্র চক্রবর্তী )
*******************************************
প্রাচীন কিছু গলিপথে আজও আলো ছুঁয়ে
যায় । এখানে যাত্রাপথ থামে অনাবিষ্কৃত প্রান্তরে।
ফসিলরা এরই আনাচে কানাচে গুছিয়ে রাখে দুধের বাটি ।
এ গলিতে হাজার বছরের উষ্মতা ।
ভাবনার পরে চিন্তা কানের পাশ কাটিয়ে
যে ইতিহাস- খোঁড়া পায়ে গল্প করে, তাদের বুকেও
জরুলের মত লেখা থাকে - বিক্রি হয়েছিল শরীর,
ভালোবাসা নয়। মাটি ক্রমশ উর্বর হয়েছে প্রেমের
কবরে। ঘুন পোকাদের দেহে আজ জরা।
অতীতের চরিত্ররা বহাল তবিয়তে এদেরই দেহে
বাঘবন্দি খেলে। এমত সময়ে নিরোধ পরে ভালোবাসাও।
 তবে এবার শেষ পাতায় এলোমেলো
টবে এসেছে এক ঝাঁক কুড়ি।।

রোজনামচা ( ১০-০১-১৮ © পবিত্র চক্রবর্তী )
********************************************
এখানে রাত নামে তারাদের শরীরে ভর করে ।
কুয়াশা ওড়নায় আবৃত জোনাকির দল একে
একে বাতি জ্বালে পল্লীর শিরায় উপশিরায় । 
কানা বৈরাগী শোনায় মহুয়া মদির গান । কোমল 
নেশায় রাতের ঘনত্ব বাড়ে । মাটির কোলে মাথা 
রেখে উষ্ণতা খুঁজি আমি । শ্রান্তি নামে দেহে ।
চোখের পাতা ভারী হয়েছিল কোন এক ঘড়ির কাঁটায় ।
 সময় এখন নিলামে বিক্রি হয় ।
চেয়ে দেখি , সহস্র স্বর্ণাভ বর্শায় বিদ্ধ দেবদারু পাতা ।
যে নদী কাল নেচে ছিল আমার পায়ে , আজ তার
শরীরে ছুঁয়ে আছে নামহীন লাশ । বারুদ মাখা
খবরের পাতা ঘোষণা করে - স্বপ্নের ঘড়ে মাথা
কুটেছে নারীর নরম শরীর গত রাতে ।
এইভাবেই নিয়ত শেষ হয় আপেক্ষিক উষ্ণতার রাত ।
 কবি তাও লিখে চলে কাব্য ।
এইমাত্র শীত ঘুম ভেঙে জেগে উঠলো গোলাপ কুঁড়ি ॥

জন্মকাহীনি (০৯-০১-১৮ © পবিত্র চক্রবর্তী )
********************************************
ক্রমশ ঘুম হেঁটে আসে বৃদ্ধ আঙুল ঘুরে চামড়া
মোড়া হৃদয়ে। উত্তরহীন প্রশ্নদের পাকা কলোনী 
আর নীলচে মৃত্যুর বাসরঘরে তার আপাত 
প্রতীক্ষা । এরপর সকল সঙ্গমের পর জন্ম নেবে -
শান্তি-কষ্ট-অভিমান আর সব কিছুর শেষে কবিতা ।
এখন শীত মরসুম । উষ্ণতার প্রয়োজন । পেয়ালায়
চুমুকের পর কলম ওঠে জেগে । পতিহীন বিধবার
মত পৃষ্ঠার বুকে প্রণয় করে সে । আর তার শেষে
দেখ জন্ম নিল জাত-কুলহীন অবৈধ কবিতা ।
অনুভূতির চোরাই রাস্তায় কবি-কলম আর সেই
নারী পা বাড়ায় বারবার । পৃষ্ঠারা এখানে শুষে
নেয় কলমের বীর্য । কমলার খোসার মত পরে
থাকে মাপা হাসি-চাপা কান্নায় জড়ানো কবিতা ॥

অন্তিম_ইচ্ছা ( ৮-১২-১৭ © পবিত্র চক্রবর্তী )
********************************************
রাত্রিরা নেমেছে জোনাকি ঘুম এ চোখে ;
এখন সময় কুয়াশার মত গাঢ় আর সুন্দর নারী অথবা পুরুষ ।
 যেভাবে উড়ন্ত ফানুসের বুকে ধিকিধিকি করে স্পন্দন থামে ,
 ঠিক সেভাবেই না হয় এস এ দেহে । মৃত্যু তুমি এত সুন্দর ।
অবশেষে শোনা যায় - ঘেঁটু থেকে শালের সবজে
ফুলের টুপটাপ ছন্দ । এখানে ওখানে গোলাপী-নীল লবঙ্গ
ভ্রূণের মত স্ফূরণ পূর্ব অন্তিম শ্বাস ।
আর , তারপরেই ছেঁড়া ডানা মেলবে কবেকার
মাথাকুটে মরা শালিক হৃদয় বিবর্ণ ইচ্ছারা ।
ঘুমঘুম চোখ আর দেহে লেপটে থাকবে স্মৃতিদের
পোড়া কলোনী । থাক তারা শ্যাওলার মত আবিষ্ট
হয়ে । আমি আর "আমি" একটু একটু করে মিশে
যাব আগামীর কোন এক অনামী ধূলিপথে ॥
বাইফোকাল ( ৬-১২-১৭ © পবিত্র চক্রবর্তী )
********************************************
রাতের অপলক দৃষ্টির কাছে হার মানতে মানতে ,
শেষমেশ বাইফোকাল হয়েছে মন । এতকাল যে 
কথাগুলো নাক উঁচু করে খাতার পৃষ্ঠায় সাম্রাজ্য 
চালাতো , আজ চায় সোজা ভাষায় পরিসমাপ্তি ।
পিছনে যে ছায়া চলছে , তার স্থায়িত্ব ক্রমশ ক্ষীণ-দুর্বল ।
ওরাও চায় অবসর , শ্রান্তি নামে তাদের দেহে ।
 মরা ডালে বিশ্রাম নেয় গুচ্ছ নীলচে ঘাস ফড়িং ; তারপর বাসা বাঁধে ।
 একদিন উড়ে যাওয়ার প্রাক্কালে রেখে যায় ফুসফুস খাবলানো দেহ ।
একি কেবল আমারই কথা ? হয়তোর অলংকার !
নিজেকে এখন সময় হয়েছে দেখার । মাঝে কেবল
প্রয়োজন বাইফোকালের অবসম্ভাবী নম্বর পরিবর্তন ॥

সাধারণ_গল্প ( ৩০-১১-১৭© পবিত্র চক্রবর্তী )
********************************************
ঘুম ,
এখানে এখন সদ্য মৃত মাছের দৃষ্টি । সূর্যের স্পর্শে 
নক্ষত্র অবগুণ্ঠনের আড়ে সেই ভোরে , কাঁটা তারে 
লাগে থেকে নয়নতারা রক্ত । একে একে পাড় হয় 
সহস্র নগ্ন ফাটল ধরা রুক্ষ পায়ের শব্দ ।
ঘুম
থেকে জেগে ওঠে গোধূলির অন্তিম আলো । সময়
এখন নোনা জলে সমুদ্র পাখীর মত খাদ্য সঞ্চয় ।
তবুও ছেঁড়া সুতোর মত তাল কাটে বাস্তুহারা পাকস্থলী ।
 বুকে জমে থাকা পলির স্তরের মত স্মৃতি ।
 বৃদ্ধ জামরুল তল খোয়াটে সবুজ হয় ।
পাক দিয়ে ওঠে কিছু পাতা পোড়া অতীত গল্প ।
ঘুম
ভাঙে সহসা , আবার-পুনরায় । ভ্রূয়ের মাঝে জেগে ওঠে
আগামীর বেনামী দ্বীপ । রাত এখন গভীর থেকে হাঙর হাঁ ।
 সারি সারি তীক্ষ্ণতায় ছিন্ন করে
স্বপ্নের অ্যাকুরিয়াম ।
লাশ চাপা মাটিতে আজ হাজার হাজার ঘুমদের রাজ্য । দেশ এখন শান্ত ।
 শান্ত এখন স্তনের শীৎকার । সভ্যতা , তুমি কী ঘুম ? না , আধুনিক বেয়নেট ॥


মৃত্যু অথচ জন্মের ব্যাস ( ২৮-১১-১৭©পবিত্র চক্রবর্তী )
**********************************************
হিসেব অনুযায়ী হিসেব না করতে পারাটা
নিয়ত জন্মক্ষণের সংগা । আর তারপর , জন্ম 
থেকে আপাত মৃত্যু দিক বদলায় জ্যামিতিক 
ত্রিকোণমিতি । ঠিক এমনই এক ' মৃত্যু থেকে জন্ম '
চোর-পুলিশ খেলায় , আকস্মিক অথচ বেমানান নয়
 অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ চরিত্রগুলি কাটতে থাকে 
আঁক । লাভ ক্ষতির পাটিগণিতে পরিধি হারায় পথ ।
অবশেষে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পাল্লা হয় মজবুত ।
ভোর হয় । পাতাদের ঘুম ভাঙে । ন'মাস পর স্ফীত
উদরে লাথি মেরে আরেক ব্যাসার্ধ আমারই মত
পুনরায় অস্তিত্ব প্রমাণে হয় সচেষ্ট । আর আমি !
আমি এখন অঙ্কের শেষ অধ্যায় । ক্রমশ বিন্দু থেকে বিন্দু ।
মৃত্যু তুমি তো জন্ম ! তোমার ব্যাস কত ?


তাপাঙ্ক ( ২৪-১১-১৭ © পবিত্র চক্রবর্তী )
********************************************
উষ্ণতার কাছে হার মানলো অসংখ্য স্রোতস্বিনী --
তারা এক এক করে জোয়ার-ভাটায় মশগুল ।
আমি ভয় পাই উপচে পড়া জোয়ার ; যদি ও 
মারণ ঢেউয়ে পথ হারাই ! তবুও দেখি ।
এবার শীতে ভাটাদের পূর্ণতা । হাড় বার করা
কূলে বসে ছন্দ গুনি । আর , ধোঁয়া ওঠা পূর্ণ
ভোরে ডুব দিতে থাকে আমার তামাক পোড়া ওষ্ঠ ;
আদিম হয় বিছানা , এখানে রিফিউজি হয় শীত ।
কাঁচ জানলার ও-পাশে নিম্ন থেকে উচ্চ স্বরে গান
গায় পরিযায়ী তাপাঙ্ক । কুয়াশাদের ছায়াপথ
সারা শরীরময় আঁকে রেখাচিত্র । এমনই এক কালে ,
 তোমার দেহ আলিঙ্গন করেছিল
চারটি কাঁধ । আর আমি ! আমি কল্পনার সুতোয়
 ধাপে ধাপে বুনে চলি মৃত হেমন্তের কাঁথাখানি ॥

স্রোত ( ১৩-১১-১৭ © পবিত্র চক্রবর্তী )
********************************************
এই ভাবেই নিয়ত শেষ হয় ,
রাতের থেকে আরেক রাতে 
মৃগনাভির গন্ধ ।
নখের আঁচড়ে কান্না জাগে 
নদীদের বুকে ; তবুও চলমান । 
চলমান খোঁড়া স্রোত ।
সাগর তোমার কোল রেখো খালি ॥
দুইয়ের পরে সংখ্যারা ( ২৮-১০-১৭ © পবিত্র চক্রবর্তী )
**************************************************
সবুজ আলোয় জড়িয়ে থাকা কুসুমের মত
নরম সংসারে , তিন নম্বরের সীমানা ঠিক কতটা ?
চারদিকে যে দেয়ালটা ঘরের সুরক্ষা কবচ
সেই ক্যালসিয়াম খোলসে রাত জাগা শেয়ালের 
আঁচড়ে অবশেষে চার নম্বরের ঈষত্ উঁকিঝুঁকি ।
এখন শিরীষ গাছে লেগেছে হৈমন্তীক জাগরণ ।
উষ্ণ পেয়ালায় স্পর্শের পরিমাপ বুঝে নিতে
 সংখ্যাগুলো এখন লেপটে থাকে ধোঁয়ায় । আর
আমি পর্ণমোচী বৃক্ষের মত আসন্ন শীতে বাসরের
আয়োজন করি ।
গন্ডী ভুলে সংখ্যারা যখন এক সময়ে
ছোবলে ছোবলে নীল করবে , তখন না হয় এই
শীত বিছানায় একাকী যে উষ্ণতা করেছি --
ঠিক সেখানেই পুনরায় তোমার ঠোঁটে ঠোঁট দিয়ে
বিষ তুলে দেব । সেদিন জেনো এক আর দুই এক ॥

১০
তথ্যসূত্র নির্বাক উত্তর ( ৯-১০-১৭ © পবিত্র চক্রবর্তী )
********************************************
তৃতীয় চক্ষু গলে পড়েছে , নদীতে মিশেছে রঙ ;
তাজিয়া পাট ভাঙা কাপড়ের মত ঘাম শুকাতে ব্যাস্ত ।
এখন সময় ভরা পেট অ্যাসিডের বুকে ওষুধের সুখকর প্রলেপ ।
 খবরের তর্জন-গর্জন লফ্টে রাখা ধূলায় ভাত ঘুমে মশগুল ।
কাঁটাতার অথবা উদ্ধত শিশ্ন কিংবা বেইনট কয়েক
 গেলন রক্তে স্নান করে আপাত নিরীহ মুড়ির ঠোঙা ।
অভ্যাস মত বাঁকা বিস্মিত ভ্রূ দাসে পরিণত হওয়া
লাশকাটা ঘরের ছুরির মত থরে থরে সজ্জিত । তথ্যের অপেক্ষায় ।
 সময়মত আলপনা কাটে কচি থেকে বার্ধক্যের নিথর স্বপ্নের বুকে ।
যে ভ্যান বয়ে এনেছিল মাছি ভন ভন বেওয়ারিশ কান্না । মাছি
তোমার পাখা কী ক্লান্ত ! না , দুপায়ে দিচ্ছ শান !!
তবে , সে প্রদেশের অগ্নি থেকে অবশেষে পরিণত ছাই আর
 তাজা রক্ত উর্বর করে রাখে কালের পৃষ্ঠায় ইতিহাস ।

ইতিহাস কিন্তু উত্তর দেয় ।
আবার বাজবে ঢাক , উঠবে খুশীর ফালি চাঁদ ---
কেবল থাকবে চেয়ে কয়েক অবৈধ মাংসপিন্ডের
জিজ্ঞাসু চোখ , ঈশ্বর-আল্লা তথ্যসূত্র তৈরী রেখো ॥

No comments:

Post a Comment

আত্মারা যখন অন্য গ্রহে

১ রা তটা এখন বেশ গভীর । টুক করে শব্দ হতেই কান সজাগ হয়ে উঠলো অ্যাটলাসের । মাথার মধ্যে টিঁ টিঁ কী বেশ ক্যাল্কুলেশন করেই এগিয়ে গেল দরজার ...