বাংলা মূলত আউল বাউলের ভাবনায়
নিমজ্জিত এক দেশ । যেখানে স্রোতস্বিনী শতধা বিভক্ত হয়ে সাগর সঙ্গমে মিলিত হয় ।
বাংলা সাহিত্যে সমাজের নানা দিক পরিলক্ষিত হয় প্রাচীন , মধ্যযুগের সাথে আধুনিক
যুগেও । তাছাড়াও বৈষ্ণব , শাক্ত , শৈব , কাহ্ন প্রভৃতি নানা পদের সমাবেশও বাংলা
সাহিত্যের অনেকটাই পরিপূর্ণ করে তুলেছিল । পদের আচ্ছাদন ছেড়ে গদ্য সৃষ্টির পথে
সাহিত্য জগত এক নব দিগন্তের উন্মোচন করে ।
‘ নিয়ে আবার দিয়ে দেওয়ারই নাম
সাহিত্য ’; সাহিত্যিকরা নানা ঘটনার মানস চিত্র লিপিবদ্ধরূপ আমাদের সামনে তুলে ধরেন
। লক্ষ্যণীয় বিষয় কবিতা , ছড়া , গদ্য , পদ্য প্রায় সবকিছুতেই সমকালীন দিক
প্রস্ফুটিত হয়ে থাকে । অন্যদিকে আধুনিক যুগের এক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আবার কখন কখন পুরনো লেখনী, শৈলী বা রীতিকেও আমাদের সামনে উপস্থিত করা হয়ে থাকে ।
বাংলা গদ্য সাহিত্যে মূলত
একটি নব আঙ্গিক “বেকার স্ট্রিটে”র গলি ছেড়ে চলেও আসে খুব ধীরে । সাহিত্যের অপর নাম
‘ দিবে আর নিবে ’ । পশ্চিমী সাহিত্যের একটি আঙ্গিক হল DETEACTIVE দিক । বাংলা সাহিত্যে তা “ গোয়েন্দা ” বা “
টিকটিকি ”র নামান্তর হয় ।
এক
সমীক্ষায় দেখা গেছে , নামী-অনামী-বেনামী মিলিয়ে ৯১ জন গোয়েন্দার সন্ধান বাংলা গদ্য
সাহিত্যে রয়েছে । অবশ্য একথা স্বীকার্য এই সংখ্যাটা ৯১ জনের অধিকই হবে । নব নব
সাহিত্যিকদের বাদ দেওয়াটা হয়ত বোকামী হয়ে যাবে ।
গোয়েন্দাধর্মী
বা অনুসন্ধানমূলক ঘটনার প্রবেশ বাংলা সাহিত্যে ঘটে ১৮৯০ সালে শ্রী প্রিয়নাথ
মুখার্জীর হাত ধরে । গল্পটির নাম ছিল “ দারোগার দপ্তর ”। এই সাহিত্যক পুলিস
কর্মজীবন থেকে অবসর নেওয়ার পর প্রতি মাসে লিপিবদ্ধ করে যান তাঁর কর্মজীবনের
অভিজ্ঞতার ডালিকে । যা কয়েক যুগ ধরে সাহিত্য ও পাঠকবর্গ মহলে সমাদৃত হয় । সে গল্পে
Francois Eugene Vidocq – যিনি ছিলেন এক সৈনিক , ছিল এক দুষ্কৃতি , একজন
পুলিস , দোভাষী এবং একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভ চরিত্রের সমাহার ছিল ।
পরবর্তীকালে
গদ্য সাহিত্যে গোয়েন্দা চরিত্র , তাঁর দেহ সৌষ্ঠব , তীক্ষ্ণতা , দৈহিক আকৃতি ,
মস্তিষ্কের প্রখরতা প্রভ্রিতির উপর 221B বেকার স্ট্রিটের গোয়েন্দাটির বেশ খানিকটা ছাপ ও
রেশ পরে । এমনকি শার্লক হোমসের ধূম্রকূট সেবনের স্পৃহাও অধিকাংশ বাঙালী ক্ষুরাধার
গোয়েন্দা চরিত্রের মধ্যেও ভাল ভাবেই দেখা যায় ।
প্রসঙ্গক্রমে
উল্লেখ্য বাংলা সাহিত্যের জগতের প্রায় এক বেনামি লেখক হলেন শ্রী পাঁচকড়ি দে ।
কিন্তু তিনি তাঁর এক অনন্য সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলা গোয়েন্দা কাহিনীর মধ্যে এক নব
সংযোজন করেন তা হল , গোয়েন্দার সহকারী চরিত্র । এই যোজনা ঘটে উনিশ ও বিংশ শতকের
সন্ধিক্ষণে । যার ধারা আজও একবিংশ শতকেও অব্যাহত আছে সম্পূর্ণভাবে ।
শার্লক
হোমস ও ওয়াটসন জুটির প্রথম বাংলা রূপ দেখা যায় গোয়েন্দা চরিত্র দেবেন্দ্রবিজয় এবং
অরিন্দমের মধ্যে । পাঁচকড়ি দে মহাশয় ছিলেন পাশ্চাত্য সাহিত্যের অতীব একনিষ্ঠ ভক্ত
। তিনি যেন ওই দুই চরিত্র সৃষ্টির মাধ্যমে হোমস ও ওয়াটসনকে বাঙালীয়ানায় পর্যবসিত
করেন । এক্ষেত্রে আরেকটি কথা না বললেই নয় , যে , শ্রী পাঁচকড়ি দে প্রথম বাংলায় “
শার্লক হোমস ”-এর অনুবাদ করেন ।
প্রথম
বিশ্বযুদ্ধ , ১৯১৩ সালে আরেক লেখকের লেখনী ধারা আমাদের সামনে আসে , তিনি হলেন শ্রী
দীনেন্দ্র কুমার রায় । যিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধত্তর ক্রাইম বিষয়ক পত্রিকার সম্পাদকীয়
কাজ করেছিলেন । “ WAVES OF MYSTERY ” বা “ রহস্যলহরী ”, এটিতে তাঁর প্রায় ২০০টি
উপন্যাসের সমাহার ছিল । যার কৃতিত্ব যায় দীনেন্দ্র কুমার রায়ের প্রতি । এটি
তৎকালীন সময়ে বাংলার
পাঠক মহলে সাড়া ফেলে দেয় ।
১৮৯০
থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত বাংলায় এইরকম কিছু অপরাধমূলক , গোয়েন্দাধর্মী লেখার উন্মেষ
ঘটলেও মূলত সেগুলির মধ্যে পাশ্চাত্যের স্পর্শ বেশ প্রকটই ছিল । এর কারণ অবশ্য
ইংরেজ উপনিবেশিকতা । বাঙালী এই সব লেখনী বা অনুবাদমূলক গল্প গ্রহণ করলেও হৃদয় থেকে
পুরোটা মেনে নিতে পারেন নি । পাঠকবর্গ চাইছিলেন তাদের গোয়েন্দা বা অনুসন্ধানকারীর
মননশীলতা , চরিত্র , দেহ সৌষ্ঠব , খাদ্যাভ্যাস সবকিছুর মধ্যে যেন বাঙালীয়ানা থাকে
। তাদের গোয়েন্দা যেন চলনে-বলনে , পোশাকে বাঙালী হয়ে ওঠে ।
ঠাকুর
পরিবারের অন্যতম সদস্য হলেন শ্রী হেমেন্দ্র কুমার ; যিনি তৎকালীন “ ভারতী ”
পত্রিকাতে কর্মরত ছিলেন । একাধারে নৃত্যশিল্পী , গীতিকার-সুরকার এই মানুষটি ১৯২৫
সালে নিজের জীবনধারা অনেকটাই বদল করে দেন । এর সুফল কিন্তু পরবর্তী সাহিত্যকালে ও
আগামী প্রজন্ম পেয়েছিল ।
হেমেন্দ্র
কুমার ও তাঁর বন্ধুর কুশল কাজের দ্বারা সাহিত্যের পত্রিকায় আরেকটি পালক সংযোজিত হয়
, সেটি হল “ নাচঘর ”। এই পত্রিকায় প্রায় চল্লিশ বছর ধরে প্রতিমাসে শিশু-কিশোর গল্প
, গোয়েন্দা গল্প ইত্যাদি পরিবেশিত হয়েছিল ।
হেমেন্দ্রবাবুর
“ কাঁচের কফিন ” বিশেষত বিজ্ঞান এবং অপরাধমূলক ঘটনা সম্বলিত কাহিনী । গোয়েন্দা
চরিত্রের নাম ছিল জয়ন্ত । জয়ন্ত চরিত্রের সাথে ছিল কিছুটা হাস্যরসাত্মক মূলক পুলিস
চরিত্র সুন্দরবাবু । আর ছিল চরিত্র মানিক । এরা যৌথ ভাবে অনুসন্ধান করতেন । তারা
প্রায় আশিটি ঘটনার তদন্ত করেছিলেন ।
বাংলা
ভাষাবিদ ডঃ সুকুমার সেনের মতে , জয়ন্ত-মানিক চরিত্র তথা গল্পগুলি শুধুমাত্র
সাহিত্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং তা বিজ্ঞানের অনেকটাই সহায়ক গ্রন্থ বা গল্পরাশি ।
আরেকটি বিষয় জয়ন্ত-মানিক চরিত্র প্রথম , যারা বাঙালী পোশাকে সজ্জিত হয়েছিল – ধুতি
আর কুর্তা । মজার কথা এই চরিত্রদ্বয় ব্রহ্মচারী ছিলেন ।
দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের প্রায় দোষ বছর আগে প্রবাসী বাঙালী এবং গর্বের সাথে বলতে পারি আমার
পূর্বপুরুষ (মাতুলালয়ের দিক থেকে ) শ্রী শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৩১ সালে সৃষ্টি
করেন এমন একটি চরিত্র , যার নাম ব্যোমকেশ বক্সী । এবং তাঁর সহকারী বন্ধু অজিত ।
১৯৩২ সালে প্রথম ব্যোমকেশ মুদ্রণ আকারে প্রথম প্রকাশিত হয় । একটি তদন্তের মাধ্যমে
পরিচয় হয় সত্যবতীর সাথে । যিনি পরবর্তীকালে প্রদান চরিত্রের জীবন সঙ্গিনী রূপে
আসেন । তাদের পুত্র সন্তানের নাম খোকা ।
ব্যোমকেশ
সমগ্রতে মোট ৩২ টি গল্প ও একটি অসম্পূর্ণ গল্প আছে । ব্যোমকেশ কিন্তু কখনই নিজেকে
গোয়েন্দা বলে পরিচিতি দেন নি । বারবার বলেছেন তিনি সত্যের সন্ধানী ‘ সত্যান্বেষী ’
।
ব্যোমকেস
ও অজিত বা সত্যবতীর মধ্যে সম্পূর্ণ বাঙালীয়ানা বিদ্যমান । ব্যোমকেশ চা-এর ভক্ত ,
সিগারেট খান । স্বভাবে মিষ্টভাষী । নানা সময়ে প্রয়োজন অনুসারে ছদ্মবেশ ধারণও করেন
।
কলকাতা
শহর কেন্দ্রিক গল্পগুলি গড়ে উঠলেও যেহেতু লেখকের জীবনের বেশীরভাগ প্রবাসে কেটেছে ,
সেহেতু ব্যোমকেশের অনুসন্ধানের পরিধি বাঙলার বাইরেও দেখা গেছে । জমিদার গৃহ থেকে
আম বাঙালী সর্বক্ষেত্রে সত্যের অনুসন্ধান করে গেছেন এই চরিত্রটি । লক্ষ্যনীয় আরেক
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে শ্রী শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পের মধ্যে , তা হল নকসা
। জমির দলিলের মত চিত্র অঙ্কন । যা এর পূর্বে কোন গোয়েন্দা গ্রন্থে পরিলক্ষিত হয়
নি । তাঁর শেষ অসম্পূর্ণ কাহিনী “ শিশুপাল বধ ”।
রবীন্দ্রসমকালীন
পর্যায়ের এই লেখকের পূরবে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথে “ ডিটেকটিভ ” ছোটগল্পটিও স্বল্প
রহস্যের আদলে আমাদের কাছে ধরা পরে ।
“
কিরীটী সমগ্র ” বা “ কিরীটী অমনিবাস ” বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আরেক অমূল্য গোয়েন্দা
চরিত্র । যা ১৯৪৭ সালের পর রচিত হয়েছিল । পেশায় চিকিৎসক ডাঃ নীহার রঞ্জন রায় যার
স্রষ্টা । কিরীটী রায়কে নিয়ে লেখক মোট আটটি গল্প রচনা করেছিলেন ।
তাঁর
এই চরিত্রে বা লেখনী শৈলীতে একটি দিক প্রচ্ছন্নভাবে রয়েছে, তা হ , নানা ওষুধের
ব্যবহার । যেমন – অ্যাট্রপিন আই ড্রপ , কুঁচ ফলের বীজের মত বিষাক্ত পদার্থের
মাদ্যমে হত্যা ও তাঁর অনুসন্ধান । চিকিৎসক জীবনের প্রভাব গল্পগুলির হত্যার
অনুসন্ধানের মধ্যে রয়েছে ।
“
কাঁটায় কাঁটায় ” সিরিজ , যা আরও একটি মাইলস্টোন শ্রী নারায়ণ সান্যালের । মূল
গোয়েন্দা চরিত্র প্রসন্ন কুমার বাসু , সংক্ষেপে পি কে বাসু ।
লেখকের
প্রতিটি গল্পে আততায়ী কোন না কোন ভাবে ব্যবহার করেছেন হত্যার জন্য ‘ কাঁটা ’ । কখন
‘ মাছের কাঁটা ’ আবার কখন ‘ সোনার কাঁটা ’ ইত্যাদি । একমাত্র “ নাগচম্পা ” গল্পে
‘কাঁটা ’ ব্যবহৃত হয় নি ।
পি
কে বাসু চরিত্রটি পোশাকে ব্যবহারে অনেকটাই আধুনিক বাঙালীর মত । বিংশ শতকের ছাপ
তাঁর দেহে স্পষ্ট । স্ত্রী মাঝে মধ্যে হুইল চেয়ারে বসেই পরামর্শ দেন । বাসুর দুই
জন সহকারী রয়েছে । বাসু চরিত্রটির বয়স পঞ্চাশের উপর । পাইপ খান । সব দিক দিয়ে বেশ
গুরুগম্ভীর পরিবেশের মাধ্যমে পরিবেশিত হয়েছে ।
‘
কালকূট ’ ছদ্মনামের পরিহার করে সাহিত্যিক সমরেশ বসু আধুনিক বাংলা সাহিত্যে অর্জুন
গোয়েন্দার উপহার আমাদের দিয়েছেন ।
উত্তরবঙ্গের
ছেলে তথা গোয়েন্দা চরিত্র হল অর্জুন । অর্জুন প্রয়োজনে মেনে চলে তার খুব কম কাছে
পাওয়া আরেক প্রাক্তন গোয়েন্দা অধুনা সাধুর আদেশ ।
কিছুটা
বিজ্ঞান ও অলৌকিকতার মাধ্যমে অনুসন্ধানে ব্রতী এই চরিত্রটি । পোশাকে আধুনিকতার ছাপ
আছে , সে বিংশ শতকের ছেলে । এই প্রথম কোন গোয়েন্দাকে আমরা পাই যে বাইক চালাতে
সক্ষম । সে দুরন্ত কিন্তু বিশৃঙ্খল নয় । মা’কে
ভীসনি ভালোবাসে কারণ মা ছাড়া তাঁর আর কোন নিকট আত্মীয় নেই ।
প্রদোষ
চন্দ্র মিত্র ; ভিজিটিং কার্ডে অবশ্য পদবী ‘ মিটার ’ লেখা থাকে , বিশেষত উচ্চারণে
তাই বলে । উচ্চতা ছয় ফিটের একটু বেশী । মাঝারী গড়ন । নিত্য সকালে যোগাসন করেন ।
স্থীর বুদ্ধি , অবিচল । যুক্তি দিয়ে বিচার ও অনুসন্ধান করেন । আদরে যাকে আমরা
ফেলুদা হিসাবেই অধিক জানি । একমাত্র ভাগ্নে তোপসে যার সহকারী । আর আছেন হাস্য
চরিত্র লালমোহন গাঙ্গুলী অরফে জটায়ু । যিনি আবার সাহিত্যিক ।
সত্যজিৎ
রায়ের অন্যতম অসাধারণ রচনা এই ফেলুদা । লেখক , চিত্র পরিচালক , গীতিকার , চিত্র
শিল্পি অস্কারজয়ী সত্যজিতের ‘ ফেলুদা ’ চরিত্রটি আম বাঙালীর মনে এমন ভাবে স্থান
করে নিয়েছে যাতে মনে হয় কলকাতার উল্লেখিত স্ট্রিটে আজও অবিবাহিত ফেলু মিত্তির থাকেন ।
ফেলু’দার
একটা বদ অভ্যাস আছে , ‘ চারমিনার ’ সিগারেটটা বেশী মাত্রায় খান । সত্যজিতের ফেলুদা
সিরিজের প্রতিটি গল্পেই আমরা ইতিহাস , ভূগোল বেশীমাত্রায় পাই , যা, অন্য কোন
গোয়েন্দা গল্পের চিত্রায়নে পাই না ।
প্রফেসর
শঙ্কুও কল্পবিজ্ঞানের মাধ্যমে নানা রহস্য উদ্ঘাটন করেছেন । এর স্রষ্টা স্বয়ং
সত্যজিৎ রায় ।
আধুনিক
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে শ্রী মতি নন্দীর ‘ কলাবতী ’কে আমরা কী ভাবে ভুলব !
প্রথমবার মহিলা সহকারী গোয়েন্দা প্রচ্ছন্ন প্রবেশ ঘটে ডাঃ নীহাররঞ্জনের রচনার পর ।
অন্যদিকে
আমরা ভীসনভাবে অভাব বোধ করি শ্রীমতী সুচিত্রা ভট্টাচার্যের ‘ মিতিন মাসিকে ’।
মিতিন মাসি একবিংশ শতাব্দীর এক আধুনিক মহিলার স্বরূপ । তিনি সংসারে সাথে সাথে শখের
গোয়েন্দাগিরিও চালিয়ে যেতেন । বাংলা
সাহিত্যে শ্রীমতী সুচিত্রা ভট্টাচার্য প্রথম মহিলা লেখিকা যিনি গোয়েন্দা গল্প
লিখেছিলেন ।
কী
করে ভুলব পঞ্চু ও পাঁচ ক্ষুদে গোয়েন্দাদের । “ পান্ডব গোয়েন্দা ”র রচয়িতা শ্রী
ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় সমগ্র বাঙালী সাহিত্যপ্রেমীর হৃদয়ে , বিশেষত যুবক যুবতীর
হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে আছেন এবং সারাজীবন থাকবেনও ।
পাঁচ
বন্ধু ও এক চোখের সারমেয় পঞ্চু করেছে নানা রহস্যের সমাধান ।
সন্তু-
জোজোদের মত যুবকদের আচ্ছাদন হলেন ‘ কাকাবাবু ’ । আমার আবার পরম ভাগ্য এর স্রষ্টা
আমার পিত্রালয়য়ের সম্পর্কিত আত্মীয় শ্রী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ।
আরকেওলজিক্যাল
সার্ভে অফ ইন্ডিয়াতে কাজ করতেন কাকাবাবু । আসল নান রাজা রায়চৌধুরী । এক পা কোন এক
মিশনে অন্য কাওকে বাঁচাতে গিয়ে পঙ্গু হয়ে যায় । ফলে তার চলাফেরার জন্য ক্রাচ লাগেই
। চোখে হাই পাওয়ারের চশমা । রবীন্দ্র সংগীতের অনুরাগী এই চরিত্রটি । ‘ কাকাবাবু ’
সিরিজের প্রতিটি গল্পের পরতে পরতে ফুটে উঠেছে অ্যাডভেঞ্চার , রহস্য ।
এই
প্রথম এক অনুসন্ধানকারীকে আমরা পেলাম যার কোন সিগারেট বা অন্য কোন কু-নেশা নেই ।
নিজেকে রাজা রায়চৌধুরী একদমই গোয়েন্দার তকমা দিতে চান না , বরং এ সব ঝামেলার হাত
থেকে অবিবাহিত মানুষটি দূরেই থাকতে ভালোবাসেন । ১৯৭৯ সালে শরৎকালে কাকাবাবুর প্রথম
সূত্রপাত হয় “ সবুজ দ্বীপের রাজা ” গল্পের মধ্য দিয়ে ।
শ্রী
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের আরেকটি শিশু গোয়েন্দা চরিত্র হল ‘ গোগোল ’ । এটি প্রথম কোন
শিশু যে নানা জায়গায় ঘুরতে গিয়ে রহস্যের মধ্যে পরে । আবার সেই রহস্যের মাধ্যমে
দুষ্কৃতীদের ধরিয়েও দেয় । ভয়ানক দুরন্ত চরিত্র হল গোগোল ।
বাংলা
সাহিত্যে গোয়েন্দা ইতিহাসে একটা মজার যোগসূত্র পরিলক্ষিত করতে পারি , সেটি হল
অধিকাংশ গোয়েন্দা , প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর সকলেই অবিবাহিত । অবশ্য ব্যতিক্রম আছে ।
মজার সাথে বেদনার একটি দিকও আছে । বাংলা সাহিত্যে কেবলমাত্র শ্রী ষষ্ঠীপদ
চট্টোপাধ্যায় আমাদের মাঝে জীবিত কিংবদন্তী । বাকী সমস্ত রচনাকার পার্থিব জগত থেকে
চলে গেছেন । শুধু আছে তাদের সৃষ্টি । এক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথে ‘ সোনার তরী ’ কাব্যগ্রন্থের
প্রথম কবিতাটি প্রণিধানযোগ্য –
“ শ্রাবন গগন ঘিরে
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে
শূন্য নদীর তীরে
রহিনু পরি যাহা ছিল
নিয়ে গেল সোনার তরী ।”
সাহিত্য–শিল্প
অমর অজেয় অবিনেশ্বর । সৃষ্টি থেকে যাবে , মহাকাল সৃষ্টিকেই রেখে দেবেন । স্রষ্টার
জন্য বানী দৈবের –
“ ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই –
ভরা সে তরী –
তোমারই সোনার ধানে
গিয়াছে ভরি ।”
বাংলা সাহিত্য অনেকটাই বৃহৎ । এই বহমান ধারায়
আজও সৃষ্টি হয়ে চলেছে নানা রহস্য-গোয়েন্দা মুলক গল্প , কবিতা , প্রবন্ধ । যা বাংলা
সাহিত্যকে সমৃদ্ধ যেমন করে তুলেছে তেম্ন আগামী দিনেও আরও শক্তিময় করে চলবে ।।
খুব ভালো লিখেছেন।
ReplyDelete